গত বছর হঠাৎ লকডাউনের জেরে চরম সঙ্কটে পড়েছিলেন গোটা দেশের জনগণ। চরম করোনা সঙ্কট ও লকডাউনের সেই স্মৃতি আজও তাড়া করে। তবে এবার আর সেই সঙ্কটে পড়তে চাননি বছর উনিশের ইন্দ্ররূপ গোস্বামী। লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির মাস-কমের ছাত্র পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে ২৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেন নিজের মোটরসাইকেলে চেপে। ফিরে এলেন আসামে শিলচরের বাড়িতে।
গত বছর করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আচমকাই ছাত্রাবাস ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাত্রাবাস ছেড়ে বাড়িতে ফিরবেন কী করে,তা ভেবে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে উত্তর-পূর্বের পড়ুয়াদের জন্য পাঁচটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু পথে কোথাও খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। দেশজোড়া লকডাউন। এক সময় জলও ফুরিয়ে যায়। সে সব ভাবলে আজও শিউরে ওঠেন এই পড়ুয়া৷
এ বছরও প্রায় একই সময়ে করোনার সংক্রমণ মাত্রাছাড়া হয়ে উঠছে। মহারাষ্ট্র, দিল্লীতে রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কোথাও লকডাউনের মতো পরিস্থিতি, কোথাও নৈশ কার্ফু। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে অফলাইন ক্লাস চালুর পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। ইন্দ্ররূপের চোখের সামনে ভেসে ওঠে গত বছরের ফেরার দিনগুলির ছবি। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, এ বার আর বাসে ফেরা নয়। এমনকি বিমানেও নয়৷ কারণ শিলচরের বিমানের জন্য জলন্ধর থেকে দিল্লী যেতে হয় ট্রেনে। যার ফলে মানুষের সংস্পর্শে যে কোনও জায়গায় করোনা সংক্রমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
এরপরই সিদ্ধান্ত নেন বাইকে চেপে নিজের বাড়ি ফেরার। বিষয়টা যে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ তা ভালই বুঝেছিলেন। তবে নিজের ওপর ভরসা ছিল। ঝুঁকিটা মেপে নিতে গুগল-ম্যাপে জলন্ধর থেকে শিলচর যাওয়ার রাস্তাটা ভাল করে দেখে নেন ১৯ বছরের ইন্দ্ররূপ ওরফে বনি। নিজের মোটর সাইকেলের কাগজপত্রগুলিও ভাল করে পরীক্ষা করেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স তো ঠিকই আছে, কয়েক মাস আগেই তৈরি করা হয়েছে। সে সব নিয়ে সোমবার সকালে জলন্ধর থেকে রওনা দেন। বাড়িতে জানিয়েছিলেন, চলে আসতে পারি। কিন্তু শিক্ষক পিতামাতাকে মোটরসাইকেলের কথাটা বলার সাহস পাননি।
এরপর শুক্রবার রাতে কলিং বেল টিপতেই মা দরজা খুলে হতবাক। হেলমেট পরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছেলে, উঠোনে মোটর সাইকেল! দেখে বেশ কিছুক্ষণ কথা সরছিল না তাঁর মুখ থেকে। বনির কথায়, “গত বছর থেকে অনেক স্বচ্ছন্দে এসেছি। প্রতিদিন জাতীয় সড়ক ধরে ৫০০-৬০০ কিলোমিটার চালিয়েছি। রাতে হোটেলে থেকেছি। সমস্যা হয়নি। পৌঁছে গিয়েছি পাঁচ দিনে।”