দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আর তার জেরে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। ইতিমধ্যেই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গিয়েছে আড়াই লক্ষ। তবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দেশে যখন হাহাকার দেখা দিয়েছে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেমডেসিভিয়ার ওষুধ ঘিরে, ন’শো টাকার ওষুধ বিক্রি হচ্ছে কুড়ি গুণ দামে, তখন গুজরাতের বিজেপি রাজ্য সভাপতি সি আর পাটিলের পরে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশের বিরুদ্ধে মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে রেমডেসিভিয়ার ওষুধ কালোবাজারি করার অভিযোগে সরব হলেন বিরোধীরা। সব মিলিয়ে রেমডেসিভিয়ার ওষুধ প্রশ্নে ফের এক বার অস্বস্তিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা লাফ দিয়ে বাড়ায় রেমডেসিভিয়ার ওষুধ রপ্তানির ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মোদী সরকার। ইতিমধ্যেই ওই ওষুধের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানো ও দাম কমানো নিয়ে উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্র। তার পরেই দেশের সাতটি প্রধান ওষুধ নির্মাণকারী সংস্থা ওই ওষুধের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার যখন রেমডেসিভিয়ারের জোগান স্বাভাবিক করতে চাইছে তখন ওই ওষুধ দেশে কালোবাজারি ও বিদেশে বেশি দামে বিক্রি করার চক্রের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা ফডনবিশের নাম জড়িয়ে গেল।
ঘটনা হল, দমনের ব্রুক ফার্মা নামে এক সংস্থার গুদামে তল্লাশি চালিয়ে রেমডেসিভিয়ারের প্রায় ৬০ হাজার ফাইলের খোঁজ পেয়েছে মহারাষ্ট্র পুলিশ। অভিযোগ, রপ্তানি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ওই ওষুধ বিদেশে পাঠানোর তালে ছিল ওই সংস্থা। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ওষুধ সংস্থার এক পরিচালককে ডেকে পাঠায় মহারাষ্ট্রের ভিলে পার্লে থানার পুলিশ। কিন্তু পুলিশকে অবাক করে দিয়ে ওই পরিচালকের হয়ে তদ্বির করতে গত কাল থানায় পৌঁছে যান মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র। কেন তিনি ওষুধ সংস্থার হয়ে তদ্বির করতে গিয়েছিলেন তার ব্যাখ্যা দিতে দেবেন্দ্র বলেন, ‘পুলিশের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ওই ওষুধ সংস্থার দোষ কোথায়? ওই সংস্থা দমন ও মহারাষ্ট্র প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই রেমডেসিভিয়ার মজুত করেছিল।’
কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কেন তারা ওই জীবনদায়ী ওষুধ বিদেশে পাচার করছিল তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি দেবেন্দ্র। উল্টে তিনি দাবি করেন, মহারাষ্ট্রের মানুষের যাতে রেমডেসিভিয়ারের ঘাটতি না হয় সে জন্য তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে ওই ওষুধ দমন থেকে এনেছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল ওই ওষুধ মহারাষ্ট্র সরকারের হাতে তুলে দেওয়া। সমাজকর্মী সাকেত গোখলে পাল্টা প্রশ্নে জানতে চেয়েছেন, কেন ফডনবিশ রাজ্য সরকারের মাধ্যমে ওই ওষুধ সংগ্রহে তৎপর হলেন না? এ নিয়ে কংগ্রেস নেতা সচিন সবন্তের অভিযোগ, ওষুধ সংস্থার হয়ে যে ভাবে দেবেন্দ্র তদ্বির করেছেন, পুলিশের ওপরে ‘চড়াও’ হয়েছেন তা থেকেই স্পষ্ট বিজেপি সরকার সাধারণ মানুষ নয়, কেবল শিল্পপতিদের কথা ভাবে। গুজরাতের পাটিলের মতো মহারাষ্ট্রেও দেবেন্দ্র রেমডেসিভিয়ার মজুত করে বিজেপি দফতরের মাধ্যমে ওই ওষুধ বিতরণের পরিকল্পনা নিয়েছিল বলে অভিযোগ সাকেত গোখলের।