ভোটের গাড়ি চতুর্থ দফায় ঢুকছে উত্তরে। বিলক্ষণ জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষত কোচবিহারের মাটি লোকসভায় তাঁকে শূন্য হাতে ফিরিয়েছিল লোকসভায়, সেখানেই শেষ লগ্নের প্রচারে একই সভায় তিনবার মাইক্রোফোন বন্ধ হল তাঁর। মেজাজ তো হারালেনই না মমতা, উল্টে মোক্ষম চাল দিলেন। অনুষ্ঠান শেষে মাইক্রোফোন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের মুক্তকণ্ঠে মমতা বললেন, থ্যাঙ্ক ইউ!
এ দিন শীতলকুচির জনসভায় মমতা উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্য তুলে দেওয়ার পাশাপাশিই বলছিলেন নারায়ণী সেনা নিয়ে বিজেপির দাবিকে মিথ্যে। কাগজ তুলে ধরে তিনি দেখান, তথ্যের অধিকার আইনে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে নারায়ণী ব্যাটেলিয়ান তৈরির কোনও প্রস্তাব রয়েছে কিনা। কেন্দ্রীয় সরকার তার উত্তরে স্পষ্ট বলেছে, এমন কোনও প্রস্তাব নেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। গ্যাসের দাম নিয়ে কথা শুরু করতেই ১৯ মিনিটের মাথায় মাইক খারাপ। এক মিনিটের বেশি সময় বসে থাকতে হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শব্দ ফেরত আসতেই মমতার প্রশ্ন, ‘বিজেপি বলে দেয়নি তো মিটিং খারাপ করতে’?
আবার শুরু হল সভা। এবার মমতা উন্নয়নের কথা বলছিলেন নাগাড়ে। মমতা স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী পরিকল্পনার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের স্মার্টফোন, উচ্চশিক্ষার ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও বলছিলেন। এবার মাইক বিকল হল ৩১ মিনিটের মাথায়। ব্যস্ত সময়ে তৃণমূল নেত্রী গালে হাত দিয়ে বসে রইলেন প্রায় দুই মিনিট। আওয়াজ ফেরত আসতেই সস্নেহ প্রশ্ন, ‘কেন এটা হচ্ছে বারেবারে?’ ক্ষোভ লুকিয়ে বললেন, ‘বাচ্চা ছেলে, ক্ষমা করে দিলাম, ভুলভ্রান্তি হয়েছে’। উপস্থিত সমর্থকরা বিরক্ত হওয়ার বদলে দলনেত্রীর ব্যবহারে উল্লসিতই হলো। সঙ্গে সঙ্গেই মমতার মরণকামড়, ‘মাইক খারাপ হলে আমার খালি গলা আছে। আমি রয়াল বেঙ্গল টাইগার’।
ছবি এখানেই শেষ নয়, এখনও বাকি রইল ক্লাইম্যাক্স। কর্মীদের ভোকাল টনিক দিয়ে বলছিলেন, ভয় দেখালে রুখে দা়ঁড়াতে হবে। ঠিক তখনই আবার মাইক খারাপ। এবার কপালের ভাঁজ স্পষ্ট হল। আওয়াজ আসতেই মমতার প্রশ্ন, ‘অনুষ্ঠান খারাপ করতে কত দিয়েছে’? দ্রুত গতিতে সভা সারলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বললেন, এজেন্ট হিসেবে সাহসী মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে আসতে। মেশিন পাহাড়ার নিদানও রইল। খেলা হবে স্লোগান দিয়ে সভা শেষ করে ফেলেছেন, খেলা ভাঙার আগে ওই মাইক ব্যবস্থাপকদের উদ্দেশ্যে হাসিমুখে মমতা বললেন, ‘থ্যাঙ্ক ইউ মাইকম্যান’।