গত ১০ মার্চ নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারে ভোট প্রচারে গিয়ে আক্রান্ত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর এখনও তুঙ্গে। ঘটনার পিছনে পূর্ব পরিকল্পনা ছিল বলে দাবিতে অনড় তৃণমূল নেতৃত্ব। এরই মধ্যে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী যে নন্দীগ্রামে আক্রান্ত হতে পারেন, এমন সতর্কবার্তা গোয়েন্দা বিভাগ আগেই দিয়েছিল। সেই বার্তা পৌঁছেছিল ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটির কাছেও, যাঁরা সাধারণত মুখ্যমন্ত্রী তথা ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। তার পরেও কেন ১০ মার্চ বিরুলিয়া বাজারের ঘটনা এড়ানো গেল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে পুলিশের অন্দরেই। নির্বাচন কমিশনও ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে জেলা প্রশাসন, নবান্ন এবং বিশেষ পর্যবেক্ষকদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল। তাতে নিরাপত্তায় গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে বলেই জানায় কমিশন। সাসপেন্ড করা হয় রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা বিবেক সহায়কে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটির কাছে যে এ নিয়ে ইনপুটও ছিল, এই বিষয়টি এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি।
ঠিক কী ইনপুট ছিল? সূত্রের খবর, গোয়েন্দাদের কাছে ১০ মার্চের আগেই একটি ইনপুট আসে যাতে জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামে থাকাকালীন তাঁর উপরে ইঙ্ক অ্যাটাক, অর্থাৎ কালি ছেটানো হতে পারে। অতীতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, যোগেন্দ্র যাদব, সুধীন্দ্র কুলকার্নিদের লক্ষ করে কালি ছেটানোর ঘটনা ঘটেছে দেশে। মমতাকে ঘিরেও তেমন চক্রান্তের ইঙ্গিত পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। এমনকী কারা সেই ঘটনা ঘটাতে পারে, তেমন অন্তত দু’জনের নামও জানতে পারেন তাঁরা। ভোলা নামে এক দুষ্কৃতীর নাম উঠে আসে। সেই মতো সতর্ক করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের। ঘটনা হল, বিরুলিয়া বাজারে সে দিন সন্ধেয় ইঙ্ক অ্যাটাক না-হলেও তাঁকে ঘিরে যে একটা বড় জমায়েত হয়েছিল এবং মুখ্যমন্ত্রী গাড়িতে ওঠার সময়ে সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তারক্ষীরা যে যথেষ্ট তৎপর ছিলেন না, সেটা প্রশাসনিক রিপোর্টেও উঠে এসেছে।
এই ঘটনায় নন্দীগ্রাম থানায় যে মামলা রুজু হয়েছিল, তার তদন্তভার ইতিমধ্যে গিয়েছে সিআইডির হাতে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে ইনপুট দেওয়া হয়েছিল, তাতে নির্দিষ্ট ভাবে বিরুলিয়াতেই গোলমালের সম্ভাবনার কথা জানানো হয়। কখন, কী ভাবে, কী ইনপুট এসেছিল— সে সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সিআইডির তদন্তকারীদেরও জানানো হয়েছে গোয়েন্দাদের তরফে। যে দু’জন গোলমাল পাকাতে পারেন বলে জানা গিয়েছিল, তাঁদের খোঁজ চালাচ্ছে সিআইডি। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট ভাবে ইঙ্ক অ্যাটাক বা এই ধরনের ঘটনার ইনপুট দিয়েছিলাম। তার পর কী হয়েছে, সেটা সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরাই বলতে পারবেন। সিআইডিকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’ শুধু নিরাপত্তা অধিকর্তা নয়, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অন্য যাঁদের গাফিলতি ছিল, তাঁদেরও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিশন। মুখ্যমন্ত্রীর রুটে বাজার বা জনবহুল এলাকায় সেভাবে পুলিশি বন্দোবস্ত ছিল না বলেও কমিশন মনে করছে।