প্রার্থীতালিকার প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই গোষ্ঠীকোন্দল অব্যাহত গেরুয়াশিবিরে। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভে মত্ত বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। এবার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশের প্রবল অসন্তোষ সামনে এল। ফলত ভাটা পড়েছে প্রচারেও। হাতেগোনা কয়েকজন নেতাকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শিখা চট্টোপাধ্যায়। দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, এলাকার বুথস্তরের নেতৃত্বকে উপেক্ষা করে শিখাদেবী তাঁর পছন্দের দু-চারজনকে নিয়ে ভোটপ্রচারে যাচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিটি এলাকাতেই তাঁর সঙ্গে প্রচারে থাকছেন না দলের বহু পুরোনো নেতা-কর্মী।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার এমনই পরিস্থিতি দেখা যায় এই কেন্দ্রের শিলিগুড়ি পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের শীতলাপাড়ায়। একটি হুডখোলা জিপে কয়েকজন অনুগামীকে নিয়ে শিখাদেবী তাঁর ভোটপ্রচারে এলাকায় আসেন। শুরুতেই দেখা যায়, কোন কোন জায়গা দিয়ে শিখাদেবী যাবেন, তা নিয়ে তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে শীতলাপাড়ার বিজেপির বুথস্তরের নেতা রতন শীলের মতবিরোধ হয়। আসলে রতনবাবু যে পথ দিয়ে প্রার্থীকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, তা মানা হয়নি। সেটা বোঝার পর রতনবাবুকে প্রচার থেকে সরে যেতে দেখা যায়। যদিও এ নিয়ে রতনবাবু কিছু বলতে চাননি। তবে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রের এক বিজেপি নেতা বলেন, “শিখা চট্টোপাধ্যায় যাঁদের নিয়ে প্রচার করছেন, তাঁরা সব জায়গাতেই এলাকার দলীয় নেতাদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে কোথাও ঠিকমতো প্রচার হচ্ছে না। অনেক বিজেপি প্রভাবিত এলাকায় তিনি যাচ্ছেনই না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছিল, এদিন সকাল ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রার্থী শিখা চট্টোপাধ্যায় শীতলাপাড়ার মানুষের সঙ্গে দেখা করবেন। নির্ধারিত সময়ে তিনি আসেন। হুডখোলা জিপে করে ৩০ মিনিট এ গলি-ও গলি ছুঁয়ে তাঁর প্রচারের গাড়ি অন্যত্র চলে যায়। এ নিয়েও দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাঁদের বক্তব্য, এভাবে হুডখোলা জিপে করে মুখ দেখিয়ে ভোট পাওয়া যায় না। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তিনি যে এই আসনে বিজেপির প্রার্থী, তা মানুষকে জানাতে হবে। কিন্তু এদিন তিনি যেভাবে এলাকায় ঘুরেছেন তাতে অনেক বাসিন্দাই বিষয়টি বুঝে ওঠার আগেই দূরে চলে গিয়েছেন শিখাদেবী।
এদিন শিখাদেবীর গাড়ির সামনে ঢাক বাজলেও মাইকে কোনও ঘোষণা ছিল না। ফলে অনেকেই জানতে পারেননি যে, তাঁদের পাড়ায় বিজেপি প্রার্থী প্রচারে এসেছেন। ঢাকের শব্দে কিছু মানুষ বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন, এ আবার কোন দলের প্রার্থী ? এদিন শীতলাপাড়ার এ ঘটনায় বিজেপি প্রার্থী নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রশ্ন রয়েছে। বিজেপি শিখা চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী ঘোষাণা করার পর ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আসনে নির্দল প্রার্থী হওয়ার হুমকি দিয়েছেন বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার সম্পাদক অলোক সেন। তিনি সরাসরি বলেছেন, ২০১৭ সালে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে এসেছেন শিখা চট্টোপাধ্যায়। তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজের বুথেই জিততে পারেননি। তাহলে বিধানসভা নির্বাচনে জিতবেন কীভাবে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কেন্দ্রের এক বিজেপি নেতা বলেন, শিখাদেবী পঞ্চায়েতের মতো ছোট এলাকাতেই এতদিন ভোটের কাজ করেছেন। বিধানসভার বড় এলাকা তিনি ঠিকমতো সামলে উঠতে পারছেন না। তাই প্রচারে বেরিয়ে অনেক জায়গাতেই পৌঁছতে পারছেন না। এদিন শীতলাপাড়ার অনেক জায়গাই যাননি তিনি। ভোটের মুখে এমন ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পদ্ম-নেতৃত্ব।