মেয়াদ ফুরোনোর পর কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে দফায় দফায় মামলা করেছিলেন বিরোধীরা। উদ্দেশ্য ছিল, কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রাক্তন মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে সরানো। যদিও আদালতের রায়ে বিরোধীদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের আইনি প্যাঁচে করোনাকালে মহানাগরিকের দায়িত্ব সামলানো পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।
শুধু নগরনিগমের বোর্ড অফ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নয়, কেএমডিএ চেয়ারম্যান, নবদিগন্তের চেয়ারম্যান ও ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের শীর্ষ পদও ছাড়ছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পুর দফতর সূত্রে খবর, কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারম্যান পদে ফিরহাদ ইস্তফা দিতেই রাজ্য সরকার মনোনীত বোর্ড যেমন ভেঙে যাবে, তেমনই ১৪৪টি ওয়ার্ডে প্রাক্তন কাউন্সিলরদের কো-অর্ডিনেটর পদটিও লুপ্ত হয়ে যাবে।
স্বভাবতই ফিরহাদের এক ইস্তফার জেরেই কলকাতা পুরসভায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রাক্তন কাউন্সিলররা সরকারি তকমা ‘কো-অর্ডিনেটর’ পদ হারাচ্ছেন। বোর্ড ভেঙে গেলে প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য ও ১৬ জন বরো কো-অর্ডিনেটরের গাড়ি ও সরকারি সুযোগ সুবিধাও প্রত্যাহার করবে পুরসভা। সুতরাং, বিধানসভা ভোটের ৭৫ দিন পরে কলকাতায় পুরসভা ভোট না হওয়া পর্যন্ত ১৪৪টি ওয়ার্ডেই পুরপ্রতিনিধি থাকছেন না। যদিও সমস্ত পুরসভায় প্রশাসক সরানোর দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে এবং আদালতে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা।
কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে তৃতীয়বার প্রার্থী হওয়া ফিরহাদ সম্ভবত আগামী ৭ এপ্রিল, বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। বস্তুত এই কারণে আগের দিন ৬ এপ্রিল কার্যনির্বাহী মেয়র অর্থাৎ চেয়ারম্যান পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেবেন। যদিও শনিবার পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “নির্বাচনী আইন মেনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে সরকার মনোনীত কোনও পদে থাকা যাবে না। তাই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের পদ-সহ মুখ্যমন্ত্রীর মনোনীত সমস্ত পদে ইস্তফা দিতে শুরু করেছি।”
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকার মনোনীত পদে থাকলে ‘অফিস অফ প্রফিট’ আইনে ফাঁসতে পারেন বলে ইতিমধ্যেই চারটি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন পুরমন্ত্রী। এগুলি হল, (১) স্টেট পাবলিক পলিসি অ্যান্ড প্ল্যানিং কমিটি (২) স্কিল ডেভলপমেন্ট মিশন (৩)কেবল টিভি নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান (৪)মহাজাতি সদন অছি পরিষদ। নির্বাচনী আইনের প্যাঁচে একইভাবে কলকাতার তিন প্রাক্তন মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ, দেবাশিস কুমার, দেবব্রত মজুমদারও প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যপদে ইস্তফা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।