পদ্মবনে গোষ্ঠীদ্বন্দ নতুন নয়। কখনও দলীয় কার্যালয়ে, তো কখনও আবার যোগদান মেলায়— দলের অন্দরে বারবারই বাগবিতণ্ডা-হাতাহাতিতে জড়াতে দেখা গিয়েছে বিজেপির নেতা-কর্মীদের। তবে কমিশনের তরফে ভোট ঘোষণা হওয়ার পরই সেই অন্তর্কলহ আরও বেশি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। যার মূলে ভোটের টিকিট। এবার যেমন রাজারহাট-নিউটাউনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিপাকে পড়তে হল পদ্মশিবিরকে। ওই বিধানসভা কেন্দ্রে অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু এবং ভূমিপুত্র তথা এক সময় মহিষবাথান এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত সমীর সর্দার (ভজাই)-এর ছেলে প্রসেনজিৎ সর্দারের মধ্যে কাকে প্রার্থী বাছা হবে তা নিয়ে রীতিমতো কোন্দল শুরু হয়েছে স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। বিজেপি সূত্রে খবর, এমন পরিস্থিতিতে এখন নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছে। দল চাইছে, স্থানীয় কোনও নতুন মুখকে নিয়ে আসা হোক। এই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটও ৪০ শতাংশের আশপাশে। তাই দলে এমন আলোচনাও চলছে, যদি কোনও সংখ্যালঘু মুখকে সেখানে প্রার্থী করা হয় তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে। তবে সেই তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে কার নাম ভাবা হচ্ছে তা এখনও জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, ওই আসনের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে বিজেপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে আকচাআকচি চললেও সম্প্রতি তা বড় আকার নিয়েছে। বিজেপি নেতা সব্যসাচী দত্ত এখনও খাতায়কলমে এই বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে তিনি বড় ব্যবধানে এই কেন্দ্র থেকে জোড়াফুল চিহ্নে জিতেছেন। তবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এবার কেন্দ্র বদল করে বিধাননগরে প্রার্থী হতে পারেন তিনি। আর তাই রাজারহাট-নিউটাউন কেন্দ্রের জন্য অঞ্জনা ও প্রসেনজিতের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়াটাই এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে বিজেপির কাছে। উল্লেখ্য, বিজেপি এই আসনে ২০১১ সালে ৩ হাজার ৮২৭ এবং ২০১৬ সালে ১৭ হাজার ৮৮৭ ভোট পেয়েছিল। তবে গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বারাসত কেন্দ্রের অন্তর্গত রাজারহাট-নিউটাউনে বিজেপি পায় ৭৯ হাজার ৭০০ ভোট। সেখানে তৃণমূল পেয়েছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৩৪৩টি ভোট। ব্যবধান এত বেশি হলেও তৃণমূলের বিধায়ক এখন পদ্মশিবিরে থাকায় বিজেপি এই আসনকে ‘সুবিধাজনক’ বলেই মনে করছে। আর এমন ‘সুবিধাজনক’ আসন থেকে অভিনেত্রী অঞ্জনা বসুকে প্রার্থী করতে চায় রাজ্য বিজেপির একাংশ।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আসনে কে প্রার্থী হবেন তার অনেকটাই নির্ভর করছে সব্যসাচীর ওপরে। সেই কারণে গত সপ্তাহে মুকুল রায়ের নির্দেশে অঞ্জনাকে নিয়ে রাজারহাট-নিউটাউনে যান সব্যসাচী। সেখানে কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁকে। আর এরপরেই শুরু হয় বিতর্ক। সব্যসাচী বিধাননগরের মেয়র পদ ছাড়ার পরে পরেই তাঁর অনুগামী হিসেবে পদত্যাগ করেন ভজাই-পুত্র প্রসেনজিৎ। তিনি বিধাননগরের মেয়র পারিষদ (ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ) ছিলেন। রাজারহাট-নিউটাউনে এক ডাকে চেনা নাম ভজাই। রাজ্যে পালাবদলের আগেই এক সময়ের সিপিএম ঘনিষ্ঠ ভজাইকে তৃণমূলের দিকে নিয়ে এসেছিলেন সব্যসাচী। বিভিন্ন সময় ভজাইয়ের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ উঠলে তাঁর পাশে থাকতেও দেখা গিয়েছে সব্যসাচীকে। ভজাই-পুত্র প্রসেনজিৎও ধীরে ধীরে সব্যসাচীর ঘনিষ্ঠ হন। ২০১৫ সালে বিধাননগর পুরসভার মহিষবাথান এলাকায় ২৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন প্রসেনজিৎ। এখন ভজাই চাইছেন ছেলেই লড়ুক এই আসন থেকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিভাজন স্পষ্ট দলে।