ভোট বড় বালাই। এবার সে কথাই প্রমাণ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ধূপগুড়ির দুর্ঘটনা নিয়ে সরাসরি টুইট করলেন তিনি। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারবর্গকে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে নিহতদের পরিজনদের ২ লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের এককালীন ৫০,০০০ টাকা করে সাহায্য দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মোদী। ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে সেখানের এক প্রান্তিক মফস্বল শহরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর টুইট নজিরবিহীন তো বটেই। একে তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থপূরণের কৌশল বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলেরও দাবি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতারা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন।
বুধবার রাতে ধূপগুড়ির দুর্ঘটনায় ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আগেই তা নিয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিহতদের পরিবার পরিজনকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তবে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রাজ্যের তরফে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা হওয়ার আগেই খোদ প্রধানমন্ত্রী টুইটারে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে দিয়েছেন। আর তাতেই মোদীর বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলছে তৃণমূল। এখানেই শেষ নয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে বুধবার সকাল হতেই ধূপগুড়ির দিকে রওনা দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ হাসপাতালে ভর্তি আহতদের দেখতে যাওয়ার কথা তাঁর।
ধূপগুড়ির দুর্ঘটনা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের এই তৎপরতা, সাততাড়াতাড়ি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষতিপূরণ ঘোষণা— এ সবের পিছনে ‘রাজনৈতিক কারণ’ আছে বলে মনে করছে তৃণমূল। এ নিয়ে সরাসরি বিজেপিকে কটাক্ষ করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেছেন, ‘ভোটের আগে চমক দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী! কোনও বিপদেআপদে এত দিন তাঁদের দেখা যেত না। কিন্তু এখন প্রচারের সামান্য সুযোগও তাঁরা হাতছাড়া করতে চান না।’ অন্যদিকে, গোটা ঘটনার জন্য মোটর ভেহিক্যালস বিভাগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘কোনও বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। ইচ্ছামতো মাল তুলে গাড়ি বোঝাই করা হচ্ছে। বালি-পাথর নিয়ে দ্রুতগতিতে সেই গাড়ি ছুটছে রাস্তা দিয়ে। কোনও দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। মোটর ভেহিক্যালস বিভাগের আধিকারিকদেরও এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলব।’
ফোনে পুরুলিযা সফররত মুখ্যমন্ত্রীকে গোটা ঘটনা জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সারা ক্ষণ মুখ্যমন্ত্রী ধূপগুড়ির খবর নিয়ে চলেছেন বলেও জানান তিনি। এ দিকে, পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও উত্তরবঙ্গ হাসপাতালে গিয়ে আহতদের দেখে আসেন। আহতদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা সঙ্কটজনক। আপাতত জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ৯ জন ভর্তি। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ধূপগুড়ি হাসপাতাল থেকে ৬ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২ জনকে স্থানান্তরিত করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। সকালে তাঁদের মধ্যেই একজনের মৃত্যু হয়। দলীয় নেতৃত্বকে আহত এবং নিহতদের পরিবারের সঙ্গে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। প্রশাসনিক ভাবে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।