গারদের আড়ালেই শৈশব কেটে গিয়েছে তার। তবে বিগত ১০ মাসে পৃথিবীকে নতুন করে দেখছে শাহানারা বেগমের। আসামে অনুপ্রবেশকারী বাছাই অভিযানে দিনমজুরের স্ত্রী মিনারা বেগমকে ‘বিদেশি’ তকমা দিয়ে ২০১০ সালের ১৪ মে পুলিশ যখন ধরে নিয়ে যায়, শাহানারা তখন ৭ মাসের। সবে বসতে শিখেছে। মায়ের দুধ ছাড়া কিছু খায় না। পুলিশের আপত্তি না থাকায় তাকেও সঙ্গে নেন মিনারা। আসামের কাছাড় জেলার উধারবন্দের লাঠি গ্রামের বাড়ি থেকে গোয়ালপাড়ার ডিস্ট্রিক্ট জেলে। ছয় মাস পরে কোকরাঝাড়ে। কাগজকলমে ডিটেনশন ক্যাম্প হলেও আসলে সে-ও এক জেল। সাড়ে আট বছর সেখানেই কাটে শাহানারার। আড়াই বছর বয়সে বাবাকে এক বার দেখেছিল। ছয় দিদির চার জনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, কারও চেহারাই দেখেনি। দাদাকেও দেখেনি কখনও। ২০১৯-র ১ জুন তাদের শিলচর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়। এর পরে অবশ্য বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছে কয়েক বার।
করোনা অনেকের কাছে সর্বনাশ হলেও মিনারা-শাহানারাদের কাছে যেন পৌষ মাস। সংশোধনাগারে ভিড় কমাতে দু’বছরের বেশি ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা বন্দিদের জামিনের নির্দেশ দেয় কোর্ট। ২২ এপ্রিল কার্যত গারদের বাইরের মুক্ত পৃথিবীটাকে প্রথম দেখে শাহানারা। মিনারা বেগমের দাবি, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার কারণে তাঁদের এই হেনস্থা। তিনি জানান, তাঁরা ভারতীয় পরিবার। কিন্তু দারিদ্র ও অশিক্ষার দরুন কোনও কাগজপত্র রাখার কথা কখনও ভাবেননি তাঁর বাবা, কায়ক্লেশে সংসার পালন করা দিনমজুর। তার পরে বিদেশি বলে পুলিশে মামলা হতেই মা আর দাদা ভয়ে গা-ঢাকা দেন। বিপাকে পড়েন মিনারা। যদিও শাহানারার নাগরিকত্বের সমস্যা নেই। তার জন্মের সংশাপত্র যত্ন করে রেখেছেন বাবা রহিমুদ্দিন বড়ভুঁইয়া। তাঁর নিজেরও ভারতীয় নাগরিকত্বের নথি আছে।