একুশের বিধানসভা ভোটের আগে চায়ের ঠেক থেকে শুরু করে বাড়ির অন্দরমহল, সর্বত্রই বাগযুদ্ধের পরিস্থিতি। একুশে বাংলার জমিতে কোন ফুল ফুটবে? এই নিয়েই রাজনীতিক থেকে তারকা— সকলেই যুযুধান। এবার সোশ্যাল ওয়ালে বাকবিতণ্ডায় জড়ালেন প্রবীণ রাজনীতিক তথা প্রাক্তন ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় এবং অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ।
ঘটনার সূত্রপাত একটি বাংলা চ্যানেলে অতিথি বক্তা সায়নীর বক্তব্য নিয়ে। বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে সায়নী বলেছিলেন, ‘বাইকে করে জয় শ্রী রাম রণধ্বনি দিয়ে ভয় দেখানো তো আমাদের সংস্কৃতি নয়। যে ভাবে জয় শ্রীরাম স্লোগানটিকে রণধ্বনিতে পরিণত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ভুল। ঈশ্বরের নাম ভালবেসে বলা উচিত।’
ব্যস, এমন মন্তব্যের পরই গেরুয়া শিবির সমর্থকদের বাক্যবাণ ধেয়ে আসে টলিউড অভিনেত্রীর ওপর। তাঁকে কটাক্ষ করে এক নেটিজেনের বক্তব্য, ‘সায়নী ঘোষ আদতে দেশভাগের কথা ভুলে গিয়েছেন। দেশভাগের সময় মুসলিমদের ‘অপরাধ’-এর বিষয়টি তাঁর চিন্তা-ভাবনা থেকে উবে গিয়েছে হয়ত!’
সেই টুইট তরজা নজর এড়ায়নি বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের। আর সেখান থেকেই টুইটারে বাক-বিতণ্ডার সূত্রপাত। সায়নীকে ট্যাগ করে তথাগত লেখেন, সায়নী ‘টাইপের’ মানুষকে ‘মূর্খ’ বলে মনে করেন তিনি। সেই তালিকায় যোগ করেন বাংলার বামপন্থী মানুষদেরও। তাঁর কথায়, ‘ছি! এ সব বলতে নেই। করুক না ওরা (মুসলিম) কিছু হিন্দু খুন ও মেয়েদের ধর্ষণ। হোক না সওয়া কোটি হিন্দু গৃহহীন, পথের ভিখারি। ওরাও তো মানুষ।’
পাশাপাশি বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি এ-ও বলেন যে, ‘এই লালবাবাদের সম্বন্ধে মুখ খারাপ করতে নেই। লেনিনের নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত ও সিফিলিসে মৃত্যু আমি ফাঁস করে দিয়েছিলাম বলে আমার উপরে এদের জাতক্রোধ আছে । করুণা ছাড়া এদেরকে কিছু করার নেই।’
ছেড়ে কথা বলেননি বাম মনোভাবাপন্ন টলিউড অভিনেত্রীও। তথাগতকে পালটা দিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘দেশভাগের সময় কত জন হিন্দুর মৃত্যু হয়েছিল, সে হিসেব করে এখন যাঁরা মুসলিমদের ‘মারব’ বলে শাসাচ্ছেন, তাঁরাই আদপে ‘গান্ধী কলোনি’-কে ‘গডসে কলোনি’ বানাবেন। সায়নীর বিশ্বাস, এঁরা ‘হিন্দুত্ব’ করতে গিয়ে ‘হিন্দুধর্ম’র কথা ভুলে গিয়েছেন। দেশের মানুষের দৈন্যদশা দেখলেই বোঝা যায়, দেশবাসীর মঙ্গলের জন্য তাঁরা কিছুই করছেন না।’
এই টুইট-যুদ্ধ শুধু দু’জনের মধ্যেই আটকে নেই। আশপাশ থেকে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন অন্য নেটিজেনরাও। কোথাও সায়নীকে খুনের হুমকি বা ‘দু পয়সার নাচিয়ে’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কোথাও আবার তথাগত-সহ বিজেপি-কে ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে তথাগত রায়ের শেষ টুইট বলছে, ‘আর পারছি না! ক্ষ্যামা দে, মা লক্ষ্মী!’ তার পর আর কোনও টুইট করেননি সায়নী।