কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এখনও আন্দোলনে অনড় কৃষকেরা। সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরেও মেলেনি সমাধানসূত্র। আইন প্রত্যাহার করতে নারাজ কেন্দ্র। এদিকে দেশের শাসকদলের অনেকেরই মত, পাকিস্তানি-খালিস্তানিরাই মদত দিচ্ছে কৃষক বিক্ষোভে। আড়ালে থেকে তারাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে কৃষকদের, একাধিকবার এমনই অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু তারা এসব কথায় কর্ণপাত করছে না ‘ইউনাইটেড শিখ’ সংস্থা। তাদের কাছে সেবাই ধর্ম। সংকটের দিনে কীভাবে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ানো যাবে, তাঁদের সাহায্য করা যাবে, সে বিষয়টিই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলনে কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এই সংস্থাটি।
দিল্লী-গাজিপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে চলছে আন্দোলন। কাঠফাটা রোদ্দুর থেকে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা, সবকিছুই সহ্য করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ে বদ্ধপরিকর কৃষকেরা। রাস্তার ধারেই খাওয়া-দাওয়া করছেন তাঁরা। আবার খোলা আকাশের নিচে ঘুমোচ্ছেন। অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলেও ঢোলে পড়েছেন অনেক বিক্ষোভকারী। তাঁদের এই আন্দোলনের রাস্তার প্রতিকূলতা সামান্য দূর করতেই উদ্যোগী হয়েছে ইউনাইটেড শিখ। একটি তাঁবুতে প্রয়োজনীয় নানান সামগ্রী মজুত রেখেছে তারা। শাল, গরম জামাকাপড় থেকে জুতো, তোষক, কম্বল-সহ যা যা জরুরী জিনিস, এই সংস্থার সদস্যরা তুলে দিচ্ছেন কৃষকদের হাতে। কীভাবে সামলাচ্ছেন তাঁরা পুরো বিষয়টা ? সংস্থার এক সদস্য সুখদীপ সিংহ জানিয়েছেন, এর জন্য তাঁরা টোকেনের ব্যবস্থা করেছেন। আধার কার্ড দেখিয়ে দরকারি জিনিসটি কৃষকরা নিচ্ছেন এবং তার বদলে দেওয়া হচ্ছে একটি টোকেন। পরে জিনিসটি জমা করে গেলে টোকেনও ফেরত দিচ্ছেন তাঁরা। এভাবেই কৃষকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ‘ইউনাইটেড শিখ’।
“আমরা সরাসরি বিক্ষোভে শামিল নই। তবে এই লড়াইয়ে কৃষকদের পাশে আছি তাঁদের সেবা করার মধ্যে দিয়ে। তাঁদের আন্দোলন সফল হোক, এই কামনাই করি।” জানিয়েছেন সংস্থার সদস্য সুখদীপ। শুধু এই সমস্ত সামগ্রীই নয়, কোনও কৃষক অসুস্থ হলে তাঁদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এই ‘অল ইন ওয়ান’ তাঁবুতে। “কোনও সমস্যা হলে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ পাচ্ছি। তাও নিখরচায়। এভাবে মানুষের সেবা করলে ওরা আশীর্বাদ পাবে।” জানিয়েছেন এক আন্দোলনরত কৃষক।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সাল থেকেই সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত এই সংস্থা। বন্যা থেকে ভূমিকম্প, কিংবা কোনও বিক্ষোভ-আন্দোলন, যখনই প্রয়োজন পড়েছে, সেখানে নিজেদের তাঁবু টাঙিয়েছে ইউনাইটেড শিখ। শুধু দেশেই নয়, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া-সহ বিদেশের নানা জায়গাতেও রয়েছে এদের শাখা। কিন্তু সমাজসেবা করার অর্থ আসে কোথা থেকে? সুখদীপের উত্তর, “সমাজে এখনও অনেক ভাল মানুষ আছেন, যাঁরা পাশে দাঁড়ান।” এই সেবার নেপথ্যে খালিস্তানি যোগ লুকিয়ে নেই তো ? কিংবা উদ্দেশ্য নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি ? গেরুয়া শিবিরের এমন প্রশ্নের মুখে বারবার পড়তে হচ্ছে সুখদীপদের। “মানুষের সেবা করতে এসে ওসব কথা কানে নিলে চলে না। অনেকে অনেক কিছুই বলবে। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।” জানিয়েছেন তাঁরা।