গোটা বিশ্বকে অঝোরে কাঁদিয়ে বুধবার রাতে চিরনিদ্রায় ঢলে পড়লেন ফুটবলের রাজপুত্র ডিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। ফুটবল ঈশ্বর আর নেই! যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না কোটি কোটি অনুরাগী। অবিসংবাদি নায়কের আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ দুনিয়া। শোকের আঁধারে তলিয়ে গিয়েছে তাঁর মাতৃভূমি আর্জেন্তিনা।
১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ককে শ্রদ্ধা জানাতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয়শোক ঘোষণা করেন দেশের রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্ডেজ। ৭২ ঘণ্টার জন্য ডিয়েগোর মরদেহ রাষ্ট্রপতি ভবনেই রাখা থাকবে। শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে শনিবার। ফুটবল ঈশ্বরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কাসা রোসাদার বাইরে লম্বা লাইন পড়ে যায়। কারও হাতে গোলাপ। কারও হাতে প্রিয় তারকার বর্ণময় ছবি। কেউ আবার দেশের পাতাকা গায়ে জড়িয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন ব্যারিকেড ধরে। বাঁধ মানছে না চোখের জল। কারও মৃত্যুতে এমন শোক ও হাহুতাশ দৃশ্য কখনও দেখেনি আর্জেন্তিনা। কখনও শোনেনি দেশজুড়ে এমন কান্নার রোল।
বুধবার রাতেই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল মারাদোনার মৃত্যুর খবর। শোকবার্তায় ভেসে যায় সমগ্র ক্রীড়া জগত। পেলে, মেসি, রোনাল্ডো থেকে শুরু করে সব প্রজন্মই তাঁদের হৃদয়বিদারক বার্তা পেশ করেছেন। আটের দশকে ক্লাব ফুটবলে মারাদোনার অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মিশেল প্লাতিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মারাদোনার চেয়ে বড় ফুটবলপ্রেমী আর কেউ রয়েছে বলে আমার মনে হয় না। ও সকল কিশোরের প্রথম ভালোবাসা। যে কোনও বিষয়েই শ্রেষ্ঠত্বের ঔদ্ধত্য ছিল ওর। তবে ডিয়েগোর সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, মাঠে কখনও হার না মানা মনোভাব।’
করোনার জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল বুয়েনস আইরেসের রাষ্ট্রপতি ভবন। মহামারীর জন্য আরোপিত সব বিধিনিষেধ উধাও হয়ে গিয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষটির প্রয়াণে। মারাদোনার মরদেহ রাখার জন্য খুলে দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি ভবন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ‘এল পিবো ডো ওরো’র কফিনবন্দি দেহ সেখানে পৌঁছায়। প্রথমে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। তাঁদের পাশে ছিলেন মারাদোনার ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ জয়ী দলের সতীর্থ অস্কার রুগেরিসহ একঝাঁক আর্জেন্তাইন ফুটবলার। এরপর জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি ভবনের গেট। স্বপ্নের নায়ককে শেষবার দেখার আশায় উপচে পড়ে আর্জেন্তিনার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। ভিড় সামলাতে গিয়ে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় পুলিস-প্রশাসনকে। ডিয়েগোর কাছে পৌঁছানোর জন্য ভক্তরা তখন পাগল। এই সময় জনতার সঙ্গে একপ্রকার খণ্ড যুদ্ধও বেধে যায় পুলিসের। তবে সেই বিক্ষিপ্ত ঘটনা ভুলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের শোকের সাগরে ডুবে যান অনুরাগীরা।