সকলেই মূলত পরিযায়ী শ্রমিক। করোনা-লকডাউনের ধাক্কায় নেই কাজ। দিন কাটছে টেনেটুনে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে গ্রামের প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য ধার্য হয়েছিল ২০০ টাকা চাঁদা। অক্ষমতার কথা জানিয়ে তারা ১০০ টাকা করে চাঁদা দিতে চাইলেও গ্রামের মাতব্বরদের তা মনঃপুত হয়নি। আর সেই কারণেই মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট জেলার একটি গ্রামের ১৪টি গোন্দ উপজাতি পরিবারকে দু’সপ্তাহের জন্য সামাজিক বয়কট বা একঘরে করে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত তারা শরণাপন্ন হয় জেলা প্রশাসনের। চলতি সপ্তাহে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে। তারপরই এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা সামনে আসে।
জানা গিয়েছে, বালাঘাটের লামটা গ্রামের সর্বজনীন দুর্গাপুজো সংস্থা ১৪ অক্টোবর সভা করে। ঠিক হয়, গ্রামের ১৭০টি পরিবারকে ২০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। কিন্তু তা দিতে অপারগ বলে জানিয়ে দেয় প্রায় ৪০টি গোন্দ পরিবার। কারণ লকডাউনের সময় দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার পর কাজ হারিয়ে পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতেই হিমশিম অবস্থা তাঁদের। সামাজিক চাপে পড়ে ২৬টি পরিবার ভেঙে পড়লেও ১৪টি পরিবার জানিয়ে দেয়, তারা এত টাকা দিতে পারবে না। বদলে ১০০ টাকা করে দেওয়ার কথা বলে। মাতব্বররা তাতে রাজি হয়নি। পুজো মিটলে ৩ নভেম্বর ফের সভা করে ‘পানি—টাঙ্গা’ ঘোষণা করে উদ্যোক্তারা। অর্থাৎ গ্রামের কেউ এই ১৪টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলবে না, তাঁদের বাড়ি যাবে না। তাঁরা কেউ দোকানে জিনিস কিনতে পারবে না, চিকিৎসাও পাবে না।
অত্যাচারিত পরিবারের একজন ধন সিং পার্তে জানান, কাঠের গুদামে তাঁর বাবা কাজ করতেন। সেখানে কেউ তাঁর সঙ্গে কাজ করতে রাজি হননি। বড় বড় কাঠের গুঁড়ি খুব ভারী হয়। তাই শ্রমিকরা দল বেঁধে কাজ করেন। কিন্তু তাঁর বাবাকে একা কাঠ বইতে বলা হয়। আবার স্বামী অসুস্থ হওয়ায় সাত জনের পরিবারকে একা টানতে হয় লক্ষ্মী ওয়াদখাড়েকে। তাঁর পক্ষে ২০০ টাকা দেওয়া অসম্ভব। শ্রমিকের কাজ করতে তিনি গিয়েছিলেন এলাহাবাদে। গ্রামে অসুস্থ স্বামী ও কন্যা একঘরে হয়ে যান। গত বছরেও তাঁদের বয়কট করা হয়েছিল। শহরে কাজ করে ৫০০ টাকা পাঠানোর পর বয়কট ওঠে।