সংসদের বাদল অধিবেশনে কৃষি বিলকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া ধুন্ধুমার পরিস্থিতিতে যখন বিরোধীরা সংসদ বয়কট করেছে, তখন চুপ করে বসে থাকেনি সরকারপক্ষ৷ নয় নয় করে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ হয়েছে বিরোধী-শূন্য কক্ষে, সরকার পক্ষের মাত্র কয়েক জন সাংসদের বক্তব্য দিয়ে৷ দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের এহেন প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাল তৃণমূল৷
দলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা প্রধান জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘দু’জন ব্যক্তি দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রকে খুন করেছে, ঠান্ডা মাথায়, সুপরিকল্পিত ভাবে৷ তাঁদের যাবজ্জীবন সাজা হওয়া উচিত৷ ভারতীয় দণ্ডবিধিতে সংসদ ও গণতন্ত্রকে খুন করলে কোনও সাজার কথা বলা নেই৷ এই পরিস্থিতিতে দেশের জনতাই ওঁদের সাজা দেবে৷ গুজরাতের দাঙ্গা থেকে পার পেলেও এই দু’জন ব্যক্তি গণতন্ত্রকে খুন করার অপরাধ থেকে মুক্তি পাবে না৷’ তাঁর অভিযোগ, ‘করোনা কালে আয়োজিত সংসদের বাদল অধিবেশনে গঠনমূলক কোনও আলোচনা করার অভিপ্রায় ছিল না কেন্দ্রীয় সরকারের৷ এরা চেয়েছে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে৷ তা না হলে দেশের প্রধানমন্ত্রী টুইট করেন বিরোধী সাংসদদের চা প্রত্যাখ্যান করার ঘটনা নিয়ে? এতেই বোঝা যায় সরকার কী ভাবে সবার নজর ঘোরানোর প্রচেষ্টা করেছে৷’
সংসদে পাশ হওয়া কৃষি বিলগুলির বিরোধিতায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনের ঢেউ দেশের প্রতিটি জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তৃণমূল৷ বিরোধী আন্দোলনের ইঞ্জিনও তৃণমূলই৷ কৃষি বিলের প্রতিবাদে রাজ্যসভায় বিরোধী সাংসদদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যেভাবে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে তৃণমূল, তা অবাক করেছে সরকার পক্ষকেও৷ ডেরেকের স্বভাববিরুদ্ধ আগ্রাসী ভূমিকায় হতবাক শাসক শিবিরের প্রবীণ সাংসদরাও৷ তৃণমূলের এই ভূমিকা দারুণ ভাবে প্রশংসিত হয়েছে বিপক্ষ শিবিরে৷ রাজ্যসভার ভিতরের ঘটনাপ্রবাহ যখন রাজ্যসভা টিভিতে সম্প্রচারিত হচ্ছে না, তখন তৃণমূল সাংসদরা যেভাবে নিজেদের মোবাইলে ভিডিও তোলেন তা বিতর্কিত হলেও, প্রশংসা পেয়েছে বিরোধী শিবিরে৷ পরে এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে তৃণমূল, যেখানে ২৫ লক্ষ লোক তা দেখেন৷ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে যেভাবে সব বিরোধী দলকে একত্রিত করে সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির সামনে সরকার বিরোধী ধর্নার ব্যবস্থা করা হয়, সেখানেও প্রশংসিত হয়েছে তৃণমূলের উদ্যোগ৷ কৃষি বিলের বিরোধিতায় রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লেখা, তাকে কৃষি বিলে সাক্ষর না করার অনুরোধ জানানো, উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে বিরোধী শূন্য রাজ্যসভায় শ্রম বিল পাশের ঘটনার নিন্দা করা, সব কিছুতেই ছিল তৃণমূলের সক্রিয়তা৷
এ সবের মাঝেই বুধবার বিরোধী দলের নেতারা নিজেরা আলোচনা করে স্থির করেছেন, সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে আজ বৃহস্পতিবার থেকেই দেশের প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে কৃষক, শ্রম বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের বিরোধিতায় আন্দোলন৷ ডেরেক বলেন, ‘দেশের কৃষক, শ্রমিক ও গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্যই করা হবে এই আন্দোলন।’