করোনা প্রতিরোধে প্লাজমা থেরাপিতে কিছুটা নিরাশই হয়েছিলেন দিল্লীর ডাক্তার এবং গবেষকরা। কিন্তু কলকাতাতে এই প্লাজমা থেরাপিতেই মিলল আশার আলো। হ্যাঁ, প্লাজমা থেরাপিতে বাংলা অনেককেই পিছনে ফেলে দিয়েছে। অন্তত সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনটাই তথ্য ধরা পড়ছে। এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা কিভাবে সম্ভব, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গবেষণা নেই। যদিও বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন আসা নিয়ে প্রত্যেকদিনই খবর এসে পৌঁছাচ্ছে। তার মাঝেই প্লাজমা থেরাপিতে কিছুটা হলেও আশার খবর দিল বাংলা তথা কলকাতা। এই রাজ্যে এখনও প্লাজমা থেরাপি যাদের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের বড় অংশই উপকৃত হয়েছেন বলেই গবেষকদের দাবি।
কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের অধীনে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে বর্তমানে চলছে পরীক্ষামূলক প্লাজমা থেরাপি। মূলত করোনা জয়ীদের রক্ত থেকে আলাদা করে নেওয়া হচ্ছে প্লাজমা। ওই প্লাজমায় করোনাকে কাবু করার জন্য উপযোগী অ্যান্টিবডি রয়েছে এই ধারণা থেকেই প্লাজমা থেরাপির শুরু হয়েছে। গত দুই মাস ধরে প্লাজমা থেরাপির ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে। সেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে চলার পর গবেষকরা সম্প্রতি যে প্রাথমিক রিপোর্ট কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা সিএসআইআর এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে জমা করেছেন, তাতে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গিয়েছে বলেই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের মুখ্য গবেষক তথা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “১০ জনের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দিয়ে আপাতত ভাবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। এখনও ৩০ জন রোগীর ওপর এই প্লাজমা থেরাপির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা আশা করছি দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রক্রিয়া শেষ করতে পারব। সেই কাজ শেষ হবার না পর্যন্ত কোনও ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো আমাদের পক্ষে মুশকিল। তবে এটা ঠিক যতসংখ্যক রোগীর ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।”
তবে শুধু প্লাজমা থেরাপিতে আশাব্যঞ্জক ফল নয়, বাংলায় করোনা জয়ীদের মধ্যে প্লাজমা দেওয়ার আগ্রহও বাড়ছে বলে মত গবেষকদের। গত দু’মাস আগে প্লাজমা থেরাপির জন্য আগ্রহী করোনা জয়ী না পাওয়া গেলেও বর্তমানে সেই সংখ্যাটা অনেকটাই বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অধ্যাপক দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় বলেন ” এখন অনেকেই প্লাজমা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। চিকিৎসক নার্স স্বাস্থ্যকর্মী এমনকি সাধারণ মানুষ যারা করোনা জয় করে ফিরেছে তাঁরাও ফোন করে আগ্রহ প্রকাশ করছেন প্লাজমা দেওয়ার জন্য।”