অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সংকটে দেশের ব্যাঙ্কগুলো। গত মাসে মোদী সরকারকে তোপ দেগে এমনই মন্তব্য করেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। রঘুরাম রাজনও আগামী ছ’মাসের মধ্যে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ অভূতপূর্ব মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে চলেছে বলে সতর্ক করেছেন। কিন্তু তাঁদের কথায় কান না দিয়ে দু’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যাঙ্ক-কর্তাদের বলেন, ছোট-মাঝারি শিল্প নতুন লগ্নীর জন্য ঋণ চাইলে তা খতিয়ে দেখতে হবে। আগের ঋণ শোধ হয়নি বলে পত্রপাঠ বিদায় করে দেওয়া চলবে না। এবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণও বলে দিলেন, ব্যাঙ্ক কোনও ভাবই ছোট-মাঝারি শিল্পের ঋণের আর্জি খারিজ করতে পারে না।
শিল্পমহলকে আশার আলো দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, হোটেল-পর্যটনের মতো ক্ষেত্রের জন্য ঋণ শোধের শর্ত সহজ করে দেওয়া ও ঋণের কিস্তি শোধে স্থগিতাদেশের কথা ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আলোচনা চলছে। লকডাউনের ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়া শিল্পমহলের একটা বড় অংশই ব্যাঙ্কের ঋণ কী ভাবে শোধ করবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। প্রথম সারির শিল্পপতিরা দাবি তুলেছেন, এককালীন ব্যবস্থা হিসেবে ঋণ শোধের শর্ত সহজ করে দেওয়া হোক। ঋণ শোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হোক বা কমানো হোক সুদের বোঝা। নির্মলা বলেন, ‘ঋণ শোধের শর্ত সহজ করার দিকে নজর রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। নীতিগত ভাবে এর প্রয়োজনীয়তা মেনে নেওয়া হয়েছে।’
তবে অর্থমন্ত্রীর জোড়া আশ্বাসে শিল্পমহল খুশি হলেও ব্যাঙ্ক-কর্তারা চিন্তায়। তাঁদের আশঙ্কা, এক দিকে দরাজ হাতে ঋণ বিলি, অন্য দিকে ঋণ শোধের কিস্তি সহজ করতে গিয়ে অনাদায়ী ঋণ বা এনপিএ বেড়ে যেতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০২১-এর মার্চে এনপিএ-র হার ১২.৫ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে। যা এ বছরের মার্চে ছিল ৮.৫ শতাংশ। ব্যাঙ্ক-কর্তাদের মতে, সব ক্ষেত্রে ঋণ শোধের শর্ত সহজ করে দিলে, তার অপব্যবহার হবে। ২০০৮-এ বিশ্ব জোড়া আর্থিক মন্দার পরেও এ দেশে একই রকম সুরাহা দেওয়া হয়েছিল। অনাদায়ী ঋণ কার্পেটের তলায় লুকিয়ে রাখা হয়। অনেক ব্যাঙ্ক খাতায়-কলমে এনপিএ-র বোঝা কমাতে নতুন ঋণ মঞ্জুর করে, যাতে সেই টাকায় কর্পোরেট সংস্থাগুলি আগের ঋণ শোধ করতে পারে। কিন্তু নতুন ঋণও অনাদায়ী থেকে যায়। ২০১৫-তে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে সব প্রকাশ্যে আসে।