চীনের উহান থেকেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে নোভেল করোনা ভাইরাস। এমনই অভিযোগ আমেরিকা-সহ বিশ্বের একাধিক দেশের। ইতিমধ্যেই করোনা বিশ্বে অতিমহামারীর আকার ধারণ করেছে। যার ফলে রোজই মৃত্যু মৃত্যু হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের। ভয়ানক এই স্বাস্থ্য সঙ্কটের মাঝেই ফের নতুন খবর এল। চীনে নতুন একধরনের সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে যা নাকি করোনার মতোই সংক্রামক।
যদিও মানুষের শরীরে এই ভাইরাল স্ট্রেন ছড়িয়েছে কিনা তার সঠিক তথ্য এখনও মেলেনি। তবে চীনের কয়েকটি ইউনিভার্সিটি ও চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সূত্রে জানা গেছে, এই নতুন রকম সোয়াইন ফ্লু ভাইরাল স্ট্রেনের নাম ‘জি৪’। পরিচিত এইচ১এন১ সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের স্ট্রেনের মতোই তবে কিছুটা আলাদা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এইচ১এন১ স্ট্রেনই জিনের গঠন বদলে নতুন রূপে ফিরে এসেছে।
কীভাবে মিলল এই নতুন ভাইরাল স্ট্রেনের খোঁজ? চীনের সিডিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার শুয়োরের নাসাল সোয়াব অর্থাৎ নাক থেকে নেওয়া নমুনার পরীক্ষানিরীক্ষা চলছিল। চীনের দশটি প্রদেশ থেকে ওই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। চীনে এর আগেও হানা দিয়েছিল আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লু। যার বাহক ছিল শুয়োর। যেসব প্রদেশে এই ভাইরাল সংক্রমণের প্রভাব বেশি সেখান থেকেই মূলত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই নমুনা বিশ্লেষণ করে ১৭৯ রকম ভাইরাল স্ট্রেন আলাদা করা সম্ভব হয়েছে। যাদের মধ্যে নতুন রকমের স্ট্রেন হল ওই জি৪। উল্লেখ্য, সোয়াইন ফ্লু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বা সোয়াইন-অরিজিন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ভাইরাস হল আসলে ইনফ্লুয়েঞ্জা পরিবারেরই একরকম ভাইরাল স্ট্রেন যার বাহক শুয়োর। ২০০৯ সালে এসআইভি স্ট্রেন ইনফ্লুয়েঞ্জা-সি সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এরই সাব-টাইপ হল ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ যার সংক্রামক স্ট্রেন এইচ১এন১, এইচ১এন২, এইচ২এন১, এইচ৩এন১, এইচ২এন৩ ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই উপসর্গ দেখা দেয় সোয়াইন ফ্লু হলে। জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। চিনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জি৪ ভাইরাল স্ট্রেন জিনের গঠন বদলে এইচ১এন১ এর থেকেও বেশি সংক্রামক। করোনার মতোই মানুষের দেহকোষে এই ভাইরাল স্ট্রেন বিভাজিত হয়ে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। একাধিকবার বিভাজনের ক্ষমতা আছে এই জি৪ ভাইরাল স্ট্রেনের।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে তার মোকাবিলায় শরীরে মাত্র ১০.৪ শতাংশ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। শুয়োর থেকে ছড়াতে পারে এই ভাইরাল স্ট্রেন। মনে করা হচ্ছে, শুয়োরই এদের বাহক বা হোস্ট। তবে ইন্টারমিডিয়েট রিসেপটর বা মধ্যবর্তী বাহক রয়েছে কিনা সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। মানুষের শরীরে এই ভাইরাল স্ট্রেন এখনও সংক্রমিত হয়েছে কিনা তার খবর মেলেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুয়োর পালন করা বা খামারে কাজ করেন যে ব্যক্তিরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।