কিছু দিন আগেই বেসরকারি সংস্থার হাতে দেশের ৫০০টি কোল ব্লক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই গোটা দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এরই মধ্যে এবার করোনা সঙ্কট থেকে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানোর পরিকল্পনায় কয়লায় হাত না দেওয়াই ভাল বলে মন্তব্য করলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস। সেই শক্তিসম্পদ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করা উচিত যেখানে দূষণের মাত্রা কম বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপুঞ্জের শীর্ষ নেতা। বৃহষ্পতিবার কোভিড-১৯ অতিমারীতে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিক্রিয়া শীর্ষক তথ্য প্রকাশ আলোচনায় সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এই তথ্য শুধুমাত্র বিগত তিন মাস ধরে চলা অতিমারীতে রাষ্ট্রপুঞ্জ দ্বারা গৃহীত কর্মসূচীর খতিয়ান নয়, ভবিষ্যতে কী উপায়ে এই সঙ্কটমুক্তি ঘটতে পারে তারও পথনির্দেশ।
ভিডিওর মাধ্যমে করা সাংবাদিক সম্মেলনে আন্তনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমরা সরাসরি পুরনো পথের পুনর্নির্মাণ করতে পারি না যা সঙ্কটকে আরও তীব্রতর করে তুলবে। আমাদের প্রয়োজন আরও দীর্ঘস্থায়ী, সংঘবদ্ধ, লিঙ্গ-সাম্য ভিত্তিক সমাজ এবং অর্থনীতি গড়ে তোলা।’ উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার পরিকল্পনায় কয়লাকে যুক্ত করার কোনও সদর্থক যুক্তি থাকতে পারে না। এখন সেই শক্তি ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করা প্রয়োজন যা দূষণ ছড়াবে না, কোনও গ্যাস নিঃসরণ করবে না, যা সঠিক কর্মসংস্থান করবে এবং যা অর্থ সাশ্রয়কারী। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে উদ্ধার করার উপায় হিসেবে কয়লাকে যুক্ত করার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করার সময় সেক্রেটারি জেনারেল কোনও দেশের নাম না উচ্চারণ করলেও নিশ্চিত ভাবেই যে তিনি ভারতকে ইঙ্গিত করেছেন তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত সপ্তাহেই ৪১ টি কয়লা ব্লক নিলাম করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দিয়ে দেশের প্রধান শক্তিসম্পদকে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে ৩৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হতে পারে বলে সরকারি সূত্রে আশা করা হচ্ছে। কয়লা উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে চতুর্থ হলেও কয়লা রপ্তানিতে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী জানিয়ে মোদী বলেন, এই ক্ষেত্রটিকে বেসরকারিকরণের মধ্যে দিয়ে ভারত করোনাভাইরাস যুদ্ধে শুধু জয়ীই হবে না, বর্তমান সঙ্কটকে সুযোগে পরিণত করে ভারত স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। ভারতের এই সিদ্ধান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য দেশ যাতে এই পথে না হাঁটে, সেই জন্যেই গুতেরেস কয়লাকে কোভিড-১৯ সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে না দেখার অনুরোধ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।