আশি পেরনো অশক্ত শরীরে চার কিমি পথ হেঁটে যেতেন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন। অন্নপূর্ণা প্রকল্পে প্রতিদিন দু মুঠো ভাতের আশায়। আর এই মানুষটাই কয়েক দশক আগে ক্যামেরা হাতে কাঁপিয়ে বেড়াতেন টলিপাড়া থেকে বলিপাড়া। উত্তমকুমারের প্রিয় ফটোগ্রাফার ছিলেন বৈদ্যনাথ বসাক। তার অনেক সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফারও ছিলেন। সেই মানুষটাই শেষের দিন গুলো কাটিয়েছেন চরম দুর্দশায়। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাত তিনটে নাগাদ নিজের বাড়িতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে গেলেন চির নিদ্রায়।
বৈদ্যনাথ বসাকের কাহিনি জানার পর তাঁর যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছিলেন অভিনেতা দেব। তবে সেই সুখ আর বেশিদিন সইল না। অভাবকে নিত্য সঙ্গী করেই পরলোক গমন করলেন তিনি।
শুধু উত্তম কুমার নন। বিগত শতাব্দীর পাঁচের দশক। ‘বুট পালিশ’ ছবি প্রযোজনা করছেন রাজ কাপুর। সেই ছবিতেই ক্যামেরাম্যান ছিলেন তরুণ বৈদ্যনাথ। পরের বছরই রাজকাপুর নিজেই পরিচালনা করবেন ‘শ্রী ৪২০’। তরুণ বৈদ্যনাথকে সেই ছবিতে ক্যামেরায় থাকার জন্য রাজ কাপুর আমন্ত্রণ জানালেও তাতে অসম্মতি জানান বৈদ্যনাথ। বম্বে ছেড়ে ততদিনে তিনি ফিরে এসেছেন কলকাতায়। চুক্তি করেছেন অগ্রদূত পরিচালিত উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘অগ্নিপরীক্ষা’র জন্য।
এই মানুষটাই চরম অভাবের জন্য যেতেন রহড়ায়। রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের অন্নপূর্ণা প্রকল্পে প্রতিদিন দুপুরে পাত পড়ে পঞ্চাশের বেশি। অনেকেই আসেন। ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সম্বলহীন মানুষ। তাঁদের সঙ্গে পঙ্ক্তিভোজনে রোজই সামিল হতেন আরও বৈদ্যনাথ। যদি একটু গরম ভাত মেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কয়েক তিনি ছিলেন নেপালের রাজপরিবারের আলোকচিত্রীও। নেপালের অস্থির পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কথা ভেবেই কলকাতায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন বৈদ্যনাথ। বলা চলে এক প্রকার নিঃশব্দেই চলে গেলেন এক সময়ের দাপুটে শিল্পী।