করোনা সংক্রমণ রোধ করতে গোটা দেশ জুড়ে জারি দীর্ঘ লকডাউন। আর তার জেরেই বন্ধ কল-কারখানা, রুজি-রোজগার। ফলে পেটে টান পড়তেই এখন বাধ্য হয়ে বাংলায় ফিরছেন ওঁরা। নানা রাজ্য থেকে। দলে দলে। ট্রেনে, বাসে, সাইকেলে। সঙ্গে আপশোস, দুটো বাড়তি পয়সার লোভে গিয়েছিলাম। লকডাউন হতেই আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। ফিরেও তাকাননি মালিকরা। সেখানকার সরকারি ব্যবস্থার ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। আর ‘নাক কান মুলে’ শপথ করছেন, ঘাট হয়েছে। আর অন্য রাজ্যে যাচ্ছি না। দিদির রাজ্যেই থাকব। যা হোক জুটিয়ে নেব। না খেতে পেয়ে তো আর মরতে হবে না। তাঁদের কথায় উঠে আসে সেখানকার সরকারি ব্যবস্থার ওপর রাগ-অভিমানও।
‘কুকুর-ছাগলের মতো ব্যবহার। খাবার মুখে দেওয়া যায় না। তা-ও যেভাবে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেয়! পরিস্থিতির জন্যই খাবারের লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম।’ ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মুম্বইয়ের ভাণ্ডুপ এলাকার রেস্তোরাঁ কর্মী কাটোয়ার সুজিত দাস। সেখানকার ‘দূর ছাই’ মনোভাবে বিরক্ত সুজিত-সহ কাটোয়ার তিন যুবক ঠিক করেন, বাড়ি ফিরবেন। ১০ দিন ধরে হেঁটে, লরিতে, আবার হেঁটে তবে বাড়ি। কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব মেনে শুরুতেই যদি কেন্দ্র পরিযায়ীদের ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে সংক্রমণ বা হয়রানি এতটা বাড়ত না।
চেন্নাই সেন্ট্রাল থেকে মুর্শিদাবাদে ফেরার জন্য বন্ধুদের টাকায় কিনেছিলেন সাইকেল। সেই সাইকেলে ১৮০০ কিমি পথ পেরিয়ে মোহন শেখ, বুলেট শেখ-সহ ৮ শ্রমিক বাড়ি ফিরেছেন। বাংলায় এসে পুলিশের যে ‘সহযোগিতা ও সহমর্মিতা’ পেয়েছেন তা আজীবন ‘বাঁধিয়ে রেখে’ বাংলাতেই কিছু করে পেট চালাতে বদ্ধপরিকর মোহন-বুলেটরা। আবার টানা ২ দিন হেঁটে একটি মালবাহী লরিতে চেপে খড়্গপুর। সেখান থেকে ফের পায়ে হেঁটে, কখনও রেলপথ, কখনও হাইওয়ে ধরে কাটোয়ার ফেরিঘাটে নৌকোয় ওঠার সময় বছর ছাব্বিশের সেলিম বললেন, ‘এখানকার পুলিশ বলুন, প্রশাসন বলুন, কত মানবিক।’ সেলিমদের ধনুক ভাঙা পণ, নিজের ভিটেয় আলুসেদ্ধ-ভাত খেয়ে থাকব। তবু অন্য রাজ্যে? নৈব নৈব চ।