করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গিয়েছেন একের পর এক সাধারণ মানুষ। আর সেই প্রয়াতদের মরদেহ সৎকারে তিনি অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এ পর্যন্ত ঢাকার নারায়ণগঞ্জের ৬১ জনের শেষকৃত্য করে এবার নিজেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। শনিবার তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।
গত ৩ মাস তিনি এই কাজের জন্য থাকছিলেন বাড়ির বাইরে। স্থানীয় কাউন্সিলর খোরশেদ নারায়ণগঞ্জে নিজের ওয়ার্ড তো বটেই, অন্যত্রও করোনা ভাইরাসে মৃতদের শেষকৃত্যে এগিয়ে গিয়েছেন। মৃতের আত্মীয়েরা এগিয়ে না এলে খোরশেদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকের দল সৎকারের কাজ করে গিয়েছেন।
এর আগে ২৪ মে খোরশেদের স্ত্রী আফরোজা খন্দকারও আক্রান্ত হয়েছেন। তখন খোরশেদ ও তাঁর ৩ সন্তানের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। সেই থেকেই আফরোজা বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। খোরশেদ বাংলাদেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের সেবা, বিশেষ করে সৎকারের বিষয়ে নিজেই উদ্যোগী হয়ে একটি দল গড়ে তুলে সারা দেশেই বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন। করোনা সংক্রমণের খবর জানার পরে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে চলছে প্রার্থনা। খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ সিটির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রথম মৃত্যু হয় ২৯ মার্চ। এর পর নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। সংখ্যা বাড়তে শুরু করে মৃতেরও। প্রায় প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের ঘটনা ঘটছে। আর এসব মৃত্যুর ভয়াবহ দিক হচ্ছে আত্মীয়স্বজন-সহ কেউ মৃতদেহের কাছে ঘেঁষতে চান না। সেই দেহগুলোর সৎকারের ক্ষেত্রে খোরশেদ হয়ে উঠেছেন দৃষ্টান্ত। হিন্দু বা মুসলিম ভেদ নয়, প্রতিটি মরদেহ সৎকার বা দাফনে তিনি ছুটে গিয়েছেন।
এই বিষয়ে কাউন্সিলর খোরশেদ বলেছিলেন, ‘তখন দেখলাম করোনায় আক্রান্ত হলে স্বজনরা মৃতদেহের কাছে যেতে চান না। মানবিক দিক বিবেচনা করে এটা আমার মাথায় এসেছে। আসলে মানুষের বিপদের দিনেই পাশে থাকা জরুরি। এখনই মানুষের সব থেকে বড় বিপদ চলছে। তাই আমি এই কাজে সকলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। এটাই আমার কর্তব্য।’