লকডাউনের জেরে আড্ডা প্রিয় বাঙালির এখন ভয়ঙ্কর অবস্থা। ময়দানের নামী মুখেরাও তার বাইরে নন। যেমন সুব্রত ভট্টাচার্য। যখন খেলতেন তখন সকালে প্র্যাক্টিস, দুপুরে ক্লাব তাঁবুতে ঘুম, বিকেলে মোহনবাগান লনে বসে জমিয়ে আড্ডা ছিল রোজকার রুটিন। খেলা ছাড়ার পর আড্ডাটা ছাড়েননি। প্রায় ৪০ বছরের সেই রুটিন গত কয়েক সপ্তাহে ধাক্কা খেয়েছে। সুব্রত হেসে বললেন, ‘বাড়ির লোকজন আমায় কড়া পাহারায় রেখেছে। তবে খুব অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে। এ সব ভুলতে মান্না দে-র গান শুনছি। ফোনে অনেকের সঙ্গে কথা বলছি বটে, কিন্তু তাতে মাঠে বসে আড্ডার ইচ্ছেটা আরও বেড়ে যাচ্ছে!’
এদিকে বাংলার শেষ রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তো কোনও রাখঢাক না রেখেই বলে দিলেন, ‘নিজেকে খাঁচায় বন্দি টিয়া পাখি মনে হচ্ছে! মনে হচ্ছে, পৃথিবীটা কত ছোট হয়ে গিয়েছে! আমি কলকাতার নানা ক্লাবে বিকেল বসি। আমাদের আড্ডায় সিনেমা-সাহিত্য-কবিতা-খেলা, সব নিয়ে কথা হয়। যখন অ্যাকাডেমিতে বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করি, সেটাও একটা আড্ডা। মনটাকে বাচ্চাদের মতো করে ফেলতে হয়। সে সবই এখন বন্ধ।’
প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক গোলকিপার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় সেই যে ২২ মার্চ বাড়িতে ঢুকেছেন, তারপর দু’সপ্তাহের বেশি ঘরবন্দী। দমদমের নলতার বাড়িতে বসে ভাস্কর বলছিলেন, ‘নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।’ সঙ্গে জোড়েন, ‘এখন বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গাটায় শুধু পায়চারি করছি। দূরে পরিচিত কাউকে দেখলে চিৎকার করে দু’চারটে কথা বলছি।’
কেউ মনে করছেন তিনি খাঁচায় বন্দি টিয়াপাখি হয়ে গিয়েছেন! কেউ আবার ভাবছেন, কী ভাবে একটু বাড়ির বাইরে বের হবেন! কেউ তো আবার চিৎকার করেই দূর থেকে কথা বলছেন পরিচিত মানুষদের সঙ্গে। কিন্তু শেষ অবধি এই পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে কেউই জানে না।