দিনকয়েক ধরেই আরও খারাপ হচ্ছিল পরিস্থিতি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। যার জেরে গতকালই একশো ছাড়িয়ে গিয়েছিল দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা। আজ তা বেড়ে হল ১১৪। এবং গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরও ৩৫৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যার ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে ৪,৪২১-এ। লক্ষ্য করলেই দেখা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ভাইরাস যেভাবে তার বিস্তার বাড়াচ্ছে তাতে বিশ্ব তথা ভারতে করোনার সংক্রমণ কমার কোন লক্ষণই নেই। উল্টে এমন তথ্য সামনে এসেছে যাতে চক্ষু চড়কগাছ বিশেষজ্ঞদেরও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি চারদিনে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হচ্ছে দ্বিগুণ! আর সেই হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হার যদি এই গতিতেই বাড়তে থাকে তবে লকডাউনের আগেই অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১৭ হাজার। যদি তাই হয় তবে যথেষ্ট উদ্বেগের মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশজুড়ে লকডাউন। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে মনে করা হচ্ছে, আগামী ৮ দিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ছোঁবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২০ মার্চ আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছিল পাঁচদিন অন্তর। কিন্তু ২০ থেকে ২৩ মার্চ গতি বাড়িয়ে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয় তিনদিনের মাথায়। তবে ২৩ থেকে ২৯ মার্চের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হার একটু স্লথ হয়েছিল। সেইসময় ছয়দিন অন্তর সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়েছিল। যা আশার আলো দেখাচ্ছিল ডাক্তারদের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আবার গতি বাড়িয়ে ২৯ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা চারদিন অন্তর দ্বিগুণ হয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের তরফে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ৬৯৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। এই একই সময়ের মধ্যে করোনার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। যা সাম্প্রতিক সময়ে সব থেকে বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লকডাউনের প্রথম ১৩ দিনে সংক্রমণের হার কমিয়ে রাখা গিয়েছে। কিন্তু তারা আগেই জানিয়েছিলেন, এই সপ্তাহ ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। সেই প্রেক্ষিতে প্রতি চারদিনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার খবর আশঙ্কা বাড়াচ্ছে অবশ্যভাবে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, নিজামুদ্দিন মারকাজের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের যোগ না থাকলে দেশের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধির হার গত এক সপ্তাহে অনেকটাই কম হত। সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিকরা সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা দেখে জানা গিয়েছে, দেশে মোট করোনা আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশ তবলিঘি জামাতের সঙ্গে যুক্ত। মন্ত্রক ইঙ্গিত দিয়েছে, স্থানীয় গোষ্ঠী সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে দেশের বেশ কিছু জায়গায়। সুতরাং আক্রান্তের সংখ্যা এই হারে বৃদ্ধি পেলে ধরেই নিতে হবে যে ভারতে কিছু জায়গায় গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে।