করোনার থাবায় এই মুহূর্তে থরহরিকম্প গোটা দেশ। রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। এখনও অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০৩২। মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের। যার মধ্যে রয়েছে দিল্লীর নিজামুদ্দিনে তবলিঘি জামাতের ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দেওয়া ৬ তেলেঙ্গানার বাসিন্দা ও ১ ধর্মপ্রচারক। সংক্রমণের সম্ভাবনা একধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে নিজামুদ্দিনের ওই ধর্মীয় সমাবেশ। কারণ ভারতে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জনের যোগ নিজামুদ্দিনের ওই মসজিদের জমায়েতের সঙ্গে রয়েছে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্র। এই জমায়েতে যোগ দেওয়া দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০০০ প্রতিনিধির জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশজুড়ে তাঁদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইনে রাখার কাজ চালাচ্ছে সব রাজ্য সরকার। এই জমায়েতের জন্য সংগঠন প্রধান-সহ সাতজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লী পুলিশ। খোঁজ চলছে তাঁদের। আর তারমধ্যেই গোপন আস্তানা থেকে ভিডিও বার্তায় সংগঠনের প্রধান মৌলানা সাদ কান্ধালভি জানালেন, কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তিনি।
দিল্লি পুলিশের সন্দেহ, ৫৬ বছরের মৌলানা সাদও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সেইজন্য তাঁকে খুঁজে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তাঁরা। তারমধ্যেই নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দুটি ভিডিও বার্তা দিলেন মৌলানা। প্রথম বার্তায় তিনি জানালেন, ‘মসজিদ হল মৃত্যুর জন্য সবথেকে পবিত্র জায়গা। আমার অনুগামীদের কোনও ক্ষতি করোনাভাইরাস করতে পারবে না।’ দ্বিতীয় ভিডিও বার্তায় মৌলানা বলেন, ‘এখন বিশ্বজুড়ে যা হচ্ছে তা মানুষের পাপের ফল। আমাদের ঘরে থাকতে হবে। এই একটা উপায়েই আমরা আল্লাহর রাগকে থামাতে পারব। ডাক্তারদের পরামর্শ মানুন। প্রশাসন যা বলছে শুনুন। আমাদের সদস্যরা যেখানেই আছেন, প্রশাসনের নির্দেশ পালন করবেন। আমিও ডাক্তারের পরামর্শে দিল্লিতেই কোয়ারেন্টাইনে আছি। তাই আপনারাও কোয়ারেন্টাইনে থাকুন। এটা ইসলাম বা শরিয়তের বিরুদ্ধে নয়।’ যদিও ২৩ মার্চ এই মৌলানা সাদ অভিযোগ করেছিলেন সামাজিক দূরত্ব মুসলিমদের একে অন্যের থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত।
তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি মৃত্যুর থেকে কোথায় পালাবেন? মৃত্যু আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাই এখন আল্লাহর শরণে যেতে হবে। নাকি ডাক্তারের কথা শুনে নমাজ বন্ধ করে দেবেন। একে অন্যের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত বন্ধ করে দেবেন। এটা সত্যি যে ভাইরাস আছে। কিন্তু আমার সঙ্গে ৭০ হাজার পরী আছে। তাঁরা আমাকে বাঁচাবে না তো কে বাঁচাবে। তাই এখন আরও বেশি জমায়েত করুন। একে অন্যের থেকে দূরে যাবেন না।’ যার ফলে নিজামুদ্দিনের এই ঘটনা বাইরে আসার পরে সংগঠনের প্রধান মৌলানা সাদ এবং আরও ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এফআইআরে মৌলানা সাদ ছাড়া আর যাঁদের নাম রয়েছে তাঁরা হলেন, জিশান, মুফতি শেহজাদ, এম সফি, ইউনুস, মহম্মদ সলমন, এবং মহম্মদ আশরাফ। তাঁদের বিরুদ্ধে মহামারি সংক্রান্ত আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশ কমিশনার এসএন শ্রীবাস্তব। আর সূত্রের খবর, তাঁদের নামে মামলা হতেই গত শনিবার থেকে ফেরার মৌলানা সাদ এবং দিল্লী পুলিশের করা এফআইআরে নাম থাকা বাকিরা।