‘জাতের নামে জাঁতাকল তৈরি করেছে। এই স্বৈরাচারী সরকারকে দেশ থেকে বিদায় না দেওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব’। সোমবার সকালে নেতাজি ইন্ডোরে দু’মাসব্যাপী দলের নতুন কর্মসূচি ‘বাংলার গর্ব মমতা’–র সূচনা করে এই কথাই বললেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লীর সাম্প্রতিক হিংসা পূর্ব-পরিকল্পিত গণহত্যা, যাকে পরে সাম্প্রদায়িক হিংসার রং দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে বলে মনে করেন তিনি।
সোমবারের সভা থেকেই পুরসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন মমতা। নাম না করে বিজেপি নেতাদের ঔদ্ধত্যকে তিরবিদ্ধ করে দলের নেতা, কর্মীদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘আরও নম্র এবং বিনয়ী হতে হবে। অহংকার ভেঙে মানুষের আরও কাছে পৌঁছতে হবে। আমরা যেন কখনও ঔদ্ধত্য না শিখি ওদের কাছ থেকে। আমরা যেন মানুষকে মানুষ বলে ভাবি। ঘৃণা করতে না শিখি।’ তাঁর দলে কোনও লবিবাজি নেই, সেকথা স্পষ্ট করে মমতা বলেন, ‘কেউ দলের থেকে নিজেকে বড় ভাববেন না। এই দলের কোনও লবি নেই। ভালো কাজ করলে টিকিট পাবেন। না হলে পাবেন না। পুরনো এবং নতুন, সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। পুরনো যেসব অভিমানী কর্মীরা আছেন, তাঁদের দলে ফেরাতে হবে।’ মালদা জেলায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশ্যে তৃণমূল সুপ্রিমোর কড়া নির্দেশ,‘কোনও কোনও জেলা নিজেদের ইচ্ছে মতো দল চালাচ্ছে। তার মধ্যে একটা মালদা। দল যে কথা বলবে শুনতে হবে। না হলে আমার তাকে প্রয়োজন নেই। আমি নতুন কর্মী তৈরি করে নেব, সেই ক্ষমতা আমার আছে।’
নতুন কর্মসূচি দলের সবাইকে মন দিয়ে পালন করতে নির্দেশ দিয়ে মমতা বললেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশার সময় বিনয়ী হলেও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়ার সময় আইন হাতে তুলে না নিয়েই সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী এবং দৃঢ়চেতা হয়ে লড়তে হবে। মমতার সাফ কথা, সব ভোটই যেহেতু গণতান্ত্রিক, তাই সারা বছর ধরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করলেই শুধু ভোটের বিশেষ সময়গুলিতে সেটাকে শক্তিশালী করার জন্য এত চেষ্টা করতে হবে না। নাগরিকত্ব আইন আগে থেকেই দেশে বলবৎ থাকা সত্ত্বেও ফের নতুন করে তা কার্যকর করা হল কেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এই আইনের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হিংসার ঘটনা উল্লেখ করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেছেন, ‘দিল্লীতে সংসদে সাতটা আসন জিতে রক্ত উপহার দিয়েছে। আসামে জিতেও রক্ত, হিংসা উপহার দিয়েছে। উত্তর প্রদেশে মেয়েরা অভিযোগ জানাতে পারেন না। আর জানাতে গেলে হয় তাঁদের নয় তাঁদের পরিবারকে তার মূল্য চোকাতে হয়। ত্রিপুরায় মানুষ কথা বলতে পারেন না।’
স্থানীয় হোক বা কেন্দ্রীয়, বিজেপি নেতারা বরাবরই অভিযোগ করেছেন যে বাংলায় আইনশৃঙ্খলা নেই। কিন্তু রবিবার অমিত শাহর সভায় আসার সময় যারা ‘গোলি মারো’ স্লোগান দিয়েছিল তাদের রাতের মধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে নিউ মার্কেট থানার পুলিশ। সেকথা উল্লেখ করে বিজেপির প্রতি মমতার শ্লেষ, দিল্লীতে যেসব নেতারা উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়েছিলেন তাদের এখনও কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাঁর প্রশ্ন, ‘বিজেপি কেন ঠিক করবে কারা বিশ্বাসঘাতক আর কারা নয়? এমনকী দিল্লীর সাম্প্রতিক হিংসার পরও বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব ক্ষমা চায়নি মানুষের কাছে।’
রবিবার অমিত শাহ বলেছিলেন, আগামী বিধানসভা ভোটের পর বাংলার মসনদে বসবেন কোনও ভূমিপুত্র। তাঁর ওই মন্তব্য নিয়ে রবিবারই কাটাছেঁড়া শুরু করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কোন চোখে দেখছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সোমবার সেই ইস্যুতে তোপ দেগে মমতার প্রশ্ন, ‘আমরা কি ভূমিপুত্র নই।’
বাংলার মানুষরা অন্য রাজ্যে কর্মসংস্থানে গেলে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষোভপ্রকাশ করলেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলায় সবাইকে তিনি স্বাগত জানাবেন। আগামী বুধবার সিএএ-র প্রতিবাদে ‘ছিঃ ছিঃ’ শীর্ষক ধিক্কার মিছিল করবে তৃণমূল বলে এদিন ঘোষণা করলেন মমতা। পুরভোটের জনসংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়োজিত এই কর্মসূচি ১০ মে পর্যন্ত চলবে। তিন ভাগে ভাগ করা কর্মসূচি সোমবার থেকে শুরু হয়ে চলবে আগামী ৭৫ দিন। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর পুরো দল।