সিএএ বিরোধী আন্দোলনের জেরে এখনও উত্তপ্ত মেঘালয়। খাসি ছাত্র সংগঠন ও অ-জনজাতি সম্প্রদায়ের সংঘর্ষে মৃত বেড়ে তিন। জখমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬। গত ৪৮ ঘণ্টার অশান্তিতে উত্তর-পূর্বে এই রাজ্যে ভিন রাজ্য থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিকরা বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর। প্রসঙ্গত, শুক্রবার থেকে মেঘালয়ে খাসি ছাত্র সংগঠন ও অ-জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
জানা গেছে, সোহরা, মাওলং, শিলংয়ের অনেক এলাকায় কার্ফু চলছে। বন্ধ মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। চালু করা হয়েছে টোল ফ্রি হেল্পলাইন। গত কালই সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যু হয়। পুলিশ, প্রশাসন সব সংগঠনকে দ্রুত শান্তি ফেরানোর আর্জি জানিয়েছে।
গত কাল রাতে বেশ কিছু এলাকায় আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানাচ্ছে, রাত পৌনে তিনটে নাগাদ সেলা পুলিশ ফোন পায়, পিরকিন গ্রামে উপহাসুদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে তিন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি আক্রমণ করেছে। পুলিশ গিয়ে তাঁকে হাসপাতালে আনলেও তত ক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়। শিলংয়ের পাইনথোরবা এলাকায় লক্ষ্মী বারে নামে এক মহিলার বাড়িতে পেট্রল বোমা ছোড়া হয়। তবে কেউ জখম হননি। সেই রাতেই ১টা নাগাদ মৌসিনরামের কাছে রাজু করিম নামে এক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীরা মারধর করে। তাঁকে নেগ্রিমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার থেকেই খাসি পাহাড়ের কোলের এই রাজ্যে অশান্তি ছড়াতে শুরু করে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে সিএএ এবং ইনার লাইন পারমিট নিয়ে খাসি ছাত্র সংগঠন-এর বৈঠক ছিল। এই বৈঠকের পরই উত্তেজনা ছড়ায়। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় খাসি ছাত্র সংগঠন এবং অ-জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। বেশকিছু সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একটি খড়ের গাদাও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে খবর। ওইদিনই সংঘর্ষের জেরে শিলঙে একজন প্রাণ হারান। তিনি কেএসইউ-এর সদস্য বলে খবর। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশকর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন।
এ দিকে ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় যে ঘটনা থেকে ঝামেলার সূত্রপাত, তার দায় অস্বীকার করেছে খাসি ছাত্র সংগঠন। স্থানীয়দের দাবি, বহিরাগতদের বাড়িতে আগুন লাগানোর পরে তারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। কিন্তু ছাত্র সংগঠন ও গ্রামপ্রধানরা দাবি করছেন, আক্রমণ পূর্বপরিকল্পিত ছিল। এলাকার বাঙালি, কোচ ও হাজোং বাসিন্দাদের হাতে আগে থেকেই মজুত ছিল প্রচুর অস্ত্র। খাসি সংগঠনগুলির দাবি, ইনারলাইন পারমিট চালু হলে বহিরাগতদের সমস্যা হবে জেনেই তারা পাল্টা আক্রমণ চালায়।
পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করে বিরোধী নেতা মুকুল সাংমা বছেন, ‘‘মানুষের মধ্যে বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সিএএ সাম্প্রদায়িক বিভাজন আনছে। রাজ্য সরকার ও পুলিশের অদূরদর্শিতার জন্যই পুলিশ সময় মতো কড়া ব্যবস্থা নিতে পারেনি।’’