“মানুষকে চেনা যায়, সে কাদের সঙ্গে মেশে তা দেখে। আমি কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুরদের মত মানুষদের কোম্পানিতে আর থাকতে চাই না। বিজেপি-র সদস্যপজ থেকে পদত্যাগ করছি।” ইটিভি ভারত সিতারাকে সাফ জানিয়ে দিলেন ক্ষুব্ধ অভিনেত্রী সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়। টলিউডের অনেকেই যুক্ত হয়েছিলেন বিজেপি গোষ্ঠীর সঙ্গে। ভেসেছিলেন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিতে। তবে এখন বিজেপির কার্যকলাপে বিরক্ত অনেকেই। টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়ও সেই অনেকের মধ্যে একজন। সাম্প্রতিক সামাজিক অবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ অভিনেত্রী অনেকটা তিক্ততা নিয়ে বিজেপির সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন। সাম্প্রদায়িক হিংসা, বিদ্বেষের ঘটনা এখন আমাদের দেশে প্রতিদিনের ঘটনা। মোদিজির সরকার মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে।
এই সব নিয়ে অনেকদিন ধরেই একটা রাগ তৈরি হচ্ছিল সুভদ্রার। অবশেষে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললেন তিনি ।মিছিলে সুভদ্রাসুভদ্রা আমাদের জানিয়েছেন, “আমি ভেবেছিলাম দেশের উন্নতি হবে, দশের ভালো হবে। ভেবেছিলাম মানুষকে মানুষের সম্মান দেওয়া হবে, সেটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল আমার কাছে। তবে সেই জায়গাটারই ভীষণ অভাব দেখছি এখন।
এখানে যে যার মত পন্থী হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এখন দিল্লিতে ঘটছে, ভোটের আগে কলকাতাতেও একই জিনিস হবে । এখানে আমরা কেউ ছাড় পাব না। এটা খালি নামেই হিন্দু-মুসলমান। এই করে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজ ওই মুসলমান ভদ্রলোক বলে দিলেন, দেশের ১৫ কোটি মুসলমান লড়ে যাবে হিন্দুদের সঙ্গে। কাল হিন্দু বলবে আমরা লড়ে যাব মুসলমানদের সঙ্গে। আমরা তো এটা করতে আসিনি। অন্তত আমি তো করতে আসিইনি। তিনদিন ধরে দিল্লিতে সমস্যা চলছে। তিনদিন ধরে কেউ কিছু করছে না। হঠাৎ করে তিনদিন পর থামানো হচ্ছে। ঠিক এরকমটাই আমেদাবাদে হয়েছিল…”সুভদ্রা আরও বললেন, “তাহলে কি প্রত্যেকটা জায়গাতে এরকমভাবে আগুন জ্বলতে থাকবে ? এটা কি কোনও রেমিডি ? বিষয়টা এরকম, আমি একটা অসুখ বাধিয়ে দিলাম, তারপরে এসে আমি ডাক্তারি করলাম এবং প্রমাণ করলাম যে আমি ভালো ডাক্তার। আমার এইরকম অসুখের মধ্যে থাকার দরকার নেই। আমি একজন সাধারন মানুষ। মানুষের জন্যই কাজ করতে চাই। আমার কোনও পদ, কোনও তকমার প্রয়োজন নেই। আমার প্রশ্ন আমি কাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম ? যাদের সঙ্গে আমার কোনও মানসিক মিলই নেই। দিল্লিতে ৯ মাসের একটা বাচ্চাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। যেই পুড়িয়ে থাকুক, যারাই পুড়িয়ে থাকুক, তারা তো মানুষ।
“সুভদ্রা এসব ভেবেই ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুভদ্রা। বললেন, “আমি এই পরিস্থিতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমারই ট্রমাটাই কাটছে না। কোনওরকম দলের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছি না এই মুহূর্তে। আমার মত অনেকেই বিতশ্রদ্ধ, অনেকেই বলছিলেন বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু তাদের আমি নাম আমি বলতে চাই না। আমার কোনও ভয় নেই, কোনও তকমার দরকার নেই বলে আমি ছেড়ে দিয়েছি। একটা কিছু পরিবর্তন চেয়েছিলাম, একটা কিছু ভালো হবে ভেবেছিলাম কিন্তু কোথায় কী ? অহেতুক মিথ্যে কথা বলেছে।”একজন মানুষ হিসেবে এই দলের সঙ্গে আর থাকতে চাইছেন না সুভদ্রা। থাকলে তাঁর মানবিকতাই প্রশ্নের মুখে দাঁড়াবে, মনে করছেন অভিনেত্রী।