দেওয়ালে মাথা ঠুকে নির্ভয়া কাণ্ডের দোষী বিনয় শর্মার নাকি স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে। তাঁর মানসিক স্থিতি নাকি এতটাই টলে গেছে যে, সে তার মাকেও ঠিকমতো চিনতে পারছে না। এমনটাই দাবি করেছিলেন ফাঁসির আসামি বিনয় শর্মার আইনজীবী এপি সিং। এমনকি মানসিক রোগের চিকিৎসার আর্জি জানিয়ে দিল্লীর আদালতে পিটিশনও দাখিল করা হয়েছিল। শনিবার সেই আর্জিই পত্রপাঠ ফিরিয়ে দিল দিল্লীর আদালত। সেই সঙ্গে বিচারক সাফ বলে দিলেন, মাথা খারাপের সবটাই বিনয়ের নাটক। তেমন কিছুই হয়নি। তাই চিকিৎসার প্রয়োজনও নেই।
গত রবিবার নিজের সেলের মধ্যেই দেওয়ালে মাথা ঠুকতে শুরু করে বিনয়। এক জেল কর্মী দেখে ফেলায়, তাঁকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা বলেন, চোট সামান্যই বিনয়ের। কিন্তু বিনয়ের আইনজীবী দাবি করেন, মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছে তাঁর মক্কেল। ডান হাতেও ফ্র্যাকচার হয়েছে। মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে। আইনজীবী আরও বলেন, বিনয় এখন কাউকে চিনতে পারছে না। এমনকি ওর মাকেও নয়। ওকে ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান বিহেভিয়ার অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করানো হোক। এই মর্মেও আদালতে পিটিশনও দাখিল করেন আইনজীবী এপি সিং।
গতকাল সেই মামলার শুনানিতে বিচারক এই পিটিশন খারিজ করে দেন। সরকারি আইনজীবী ইরফান আহমেদ বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার দরকারই নেই বিনয়ের। জেল কর্তৃপক্ষই আসামিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তিহাড় ডিজি সন্দীপ গোয়েল বলেছেন, তাঁদের কাছে এমন নথি রয়েছে যেটা প্রমাণ করে বিনয় শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। তার মধ্যে কোনওরকম মানসিক বিকার দেখা যায়নি। মৃত্যু পরোয়ানা জারি হওয়ার পরেই প্রাণভিক্ষার আরও কোনও রাস্তা খোলা নেই দেখে সে আমরণ অনশনে বসেছে। তাতেও বিশেষ ফল না হওয়ায়, এখন নিজের মাথা ঠুকে বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি দিল্লী আদালত তৃতীয়বার নির্ভয়ার দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের দিন ঘোষণা করেছে। এর আগেও নির্ভয়া কাণ্ডের দণ্ডিতদের ফাঁসির দিনক্ষণ নির্ধারিত করে দু’বার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছে পাটিয়ালা হাউস কোর্ট। প্রথম পরোয়ানায় ফাঁসি কার্যকরের তারিখ ছিল ২২ জানুয়ারি। তার পর দ্বিতীয় পরোয়ানায় সেই তারিখ ছিল ১ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু তার মধ্যেও সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় গত ৩১ জানুয়ারি পাতিয়ালা হাউস কোর্ট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের উপর স্থগিতাদেশ দেয়।
দিল্লী হাইকোর্টের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একসঙ্গে মামলা করেছিল কেন্দ্রীয় ও দিল্লির সরকার। দাবি ছিল, যাদের সামনে আইনের সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের আলাদা ভাবে ফাঁসিতে ঝোলানো যাবে না কেন এবং এক অপরাধীর সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি বলে বাকিদের ফাঁসি পিছিয়ে যাবে কেন সে প্রশ্নও তুলেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের দেওয়া সময়সীমা শেষের পর শীর্ষ আদালত জানায়, নিম্ন আদালতে এ বার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করতে আর কোনও বাধা নেই।