গত শনিবার বিধানসভা ভোট হওয়ার পর আজ, মঙ্গলবার ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে দিল্লীতে। যেখানে বিপুলভাবে জয়ের পথে পা বাড়িয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি। বিগত ৫ বছরে দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছে আপের ‘দিল্লী উন্নয়ন মডেল’। এই ভোটে তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। মঙ্গলবার ফলপ্রকাশ হওয়ার পরে শহর দিল্লী ও তার চার পাশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল কেন ফের কেজরিওয়ালের ওপরেই আস্থা রাখলেন তাঁরা।
সুশীল শর্মা নামের পাতিয়ালার এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘কংগ্রেস-বিজেপি সবাইকে আমি বুঝিয়েছি, কেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো লোকের দরকার। আমাদের মতো ঘরে আজ সব ছেলেমেয়েরা ড্রাগের নেশা করে বসে আছে। তাদের কাজ নেই কোনও। আমার একটাই ছেলে। তাঁকেও কলকাতায় পাঠিয়েছি, কাজের জন্য। আরে রামমন্দিরের জন্য টাকা ঢেলে কী হবে? নতুন প্রজন্মকে কাজ দিতে হবে। সেটা কেজরিওয়ালই দেবেন। উনি পাঁচ আঙুলকে আলাদা করেন না। সবাই সমান ওঁর কাছে।’
বিগত কয়েক দশক ধরে দিল্লীতেই বাস করেন সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলছিলেন, ‘বাড়ির সামনে ছোট্ট স্কুলটা চোখের সামনে বড় হয়ে যাচ্ছে দেখেছি। আগে শিক্ষকেরা সময়ে এসে পৌঁছতেন না। পড়ুয়া ছিল গুটিকয়েক। এখন ঠিক উল্টো। আমার বাড়ির কাজের মেয়ের ছেলেমেয়ে সবাই ওই স্কুলে যাচ্ছে। বিনা পয়সায় পড়তে পারছে সমাজের এই অংশ। এক জন মেয়েকে চিনি, এ ভাবেই মাস্টার ডিগ্রি পেয়ে গেল। নিখরচার শিক্ষা ছাড়াও দেখছি দিল্লির পাড়ায় পাড়ায় ‘মহল্লা ক্লিনিক’ হয়েছে। নিজের চোখে দেখেছি, বিনামূল্যে বেশ দামি দামি ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। আর বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও সব স্তরের মানুষের জন্য খরচা কমিয়ে দিয়েছে আপ সরকার। দু’শো ইউনিটের নীচে মিটার রেটিং-এ জিরো চার্জ! এ কী সেই আমার দিল্লী?’
নীনা মিত্তল। পাঞ্জাবে একটি বেসরকারি সংস্থা চালান। বলছিলেন, ‘রোজের কাজে সবচেয়ে জরুরি জল। খুব জলের কষ্ট আমাদের পাঞ্জাবে। কারও হুঁশ নেই। অথচ দিল্লীতে যে কোনও মানুষকে জিজ্ঞেস করুন, এখন ঘরে ঘরে অফুরন্ত জল। আগে তো দিল্লীও পাঞ্জাবের মতো ছিল। কেজরিওয়াল বুঝেছেন, সাধারণ মানুষের কষ্ট কোথায়। উনি তো ঘরে ঘরে পৌঁছে যান। গরিব-বড়লোক সবার ঘরে। অন্য নেতাদের মতো দূর থেকে হাত নেড়ে চলে যান না। কথা বলেন এমন করে, মনে হয়, নিজের কেউ! তাই উনি এসেছেন আবারও।’
আইটি সেক্টরে চাকরিরতা স্নেহা মালহোত্রা বললেন, ‘সবচেয়ে আগে চোখে পড়ে ওঁর বিজ্ঞাপন পদ্ধতি। পলিটিক্যাল পার্টির বিজ্ঞাপন মানেই, ‘আমরা এই করেছি। সেই করেছি।’ নেতাদের বড় বড় ছবি। আপের অ্যাডগুলো ছোট আর শুধু কাজের কথা বলে। একটা শিক্ষিত রাজনীতির চেহারা ফুটে উঠছে দিল্লীতে। মানুষ এটাতে খুশি। তাই আপের এই জয়।’
অনামিকা। পেশায় নাট্যকর্মী। কেজরিওয়ালের জয়ে খুশি তিনি। বলছিলেন, ‘অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন কোনও দেশের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নয়নের কথাই বলেছেন। এই ওয়েলফেয়ারের কাজটাই করেছে আপ। আমরা ভাবতে পেরেছিলাম, সরকারি স্কুলে সুইমিং পুল থাকবে? আমি নিজে দিল্লীর সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি, কী অসম্ভব ভাল পরিবেষা। কেজরিওয়াল দিল্লীর মানুষকে এই সুষ্ঠ পরিষেবা দিচ্ছেন। আপ আসায় আমি খুশি। এটা জরুরি ছিল।’