সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে জেরে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর গুয়াহাটি সফর বাতিল করা হয়েছিল। গতমাসেও খেলো ইন্ডিয়ার উদ্বোধনে আসেননি তিনি। আসলে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের দেখলেই কালো পতাকা দেখাচ্ছেন সিএএ-বিরোধীরা। এই অবস্থায় বিজেপি শাসিত আসামে আসতে ভয়ই পাচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে অবশেষে এবার আসাম সফরে এলেন প্রধানমন্ত্রী। সিএএ নিয়ে অশান্তির পর এই প্রথম। আর শুক্রবার অসমিয়াদের মন জিততে দ্রুত বাঙালিদের স্বার্থ বিসর্জনের ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন তিনি।
শুক্রবার আসামের কোকরাঝাড়ে মোদী জানান, শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে অাসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা। এই ৬ নম্বর ধারাতেই রয়েছে অসমিয়া সংস্কৃতি রক্ষার নামে বাঙালির অধিকার কেড়ে নেওয়ার অস্ত্র। এমনটাই মনে করেন আসামের বাঙালিরা। সিএএ-বিরোধী ক্ষোভ সামলাতে মোদী কামাখ্যা মায়েরও শরণ নেন। বলেন, ‘কামাখ্যা মা’র প্রতি আমি আস্থাশীল। আপনারা ভরসা রাখুন সিএএ-র কারণে কোনও বিদেশিই আসামে ঢুকতে পারবে না। আমি আপনাদের রক্ষা করব।’
প্রসঙ্গত, গতকাল রাজধানী গুয়াহাটি বিমানবন্দর থেকেই ফৌজি চপারে কোকরাঝাড় উড়ে যান মোদী। বড়ো অধ্যুষিত কোকরাঝাড় থেকেই অসমিয়াদের মন জয়ের চেষ্টা করেন তিনি। বিভিন্ন বড়ো জঙ্গী সংগঠনের আত্মসমর্পণ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য নিজের ভালবাসার কথা জাহির করতেও কসুর করেননি প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে ছিল আর্থিক সহায়তার ঘোষণাও। তাঁর ভাষণে রাহুল গান্ধীর প্রতি কটাক্ষেও খামতি ছিল না।
তবে অসমিয়াদের ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার নামে বিপ্লবকুমার শর্মা কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়ন করার ইঙ্গিত দিয়ে বাঙালিদের শঙ্কিত করে তুললেন তিনি। এনআরসি আর সিএএ নিয়ে এমনিতেই আসামের বাঙালিরা সন্ত্রস্ত। সিএএ নিয়ে অবশ্য শুক্রবার কোনও অভয়বাণী শোনা যায়নি মোদীর ভাষণে। এনআরসি নিয়ে চুপ থাকলেও সিএএ নিয়ে ভিনদেশিদের হাত থেকে আসামবাসীকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি ছিল তাঁর বক্তৃতায়। এই অবস্থায় মোদীর ভাষণ হিন্দু বাঙালিদেরও আতঙ্কিত করে তুলেছে।
মোদী বলেন, ‘আমি কাজ ফেলে রাখার লোক নই। ৬ ধারা দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।’ উল্লেখ্য, আসাম চুক্তির ৬ ধারা বাস্তবায়ন করতে ইতিমধ্যে কমিটি গড়ে তুলেছে আসাম সরকার। কমিটিতে অসমের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি থাকলেও বাঙালিরা বাদ। এ প্রসঙ্গে আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির সভাপতি তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, বাঙালির অধিকার কেড়ে নেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রের অঙ্গ এই ৬ ধারা। বাঙালি জাতি এমনিতেই দানবিক আক্রমণের শিকার। ৬ ধারা লাগু হলে আসামে বাঙালিদের আর কোনও অধিকারই থাকবে না।