রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই শক্ত হাতে রেশনিং ব্যবস্থার হাল ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উদ্যোগেই রেশনে সরকারি বরাদ্দ বেড়ে এখন মাথাপিছু মাসিক ৮ কিলো চাল এবং ৩ কিলো গম। কিন্তু এবার রেশনে বাজেট বরাদ্দ একধাক্কায় অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। গত বছর এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এবার তা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৭০ কোটিতে। আর এতেই চিন্তা বেড়েছে নবান্নর। সরকারি আধিকারিকদের আশঙ্কা, বাজেট বরাদ্দ কমায় রেশনের জোগানে টান পড়তে পারে। কমে যেতে পারে মাথাপিছু বরাদ্দ। রাজ্যের চাষিদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান কেনার কাজও হোঁচট খাবে।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে রাজ্যের ঘাড়ে বিশাল আর্থিক বোঝা চাপবে। রেশন ব্যবস্থার উপরও প্রভাব পড়বে। কেন্দ্রের কাছে আমাদের ৩,৫০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আইসিডিএসের চাল দেওয়ার কথা এফসিআইয়ের। গত দু’বছর ধরে তারা আমাদের কাছ থেকে চাল নিচ্ছে। এর জন্য এফসিআইয়ের কাছে ৮৫০ কোটি টাকা পাই আমরা। সেটাও দিচ্ছে না। বাজেট বরাদ্দ কমে যাওয়ায় সবটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’
খাদ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই মুহূর্তে রাজ্যের প্রায় সাড়ে আট কোটি মানুষ অতি সামান্য মূল্যে রেশনের চাল-গম পান। জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা যোজনার আওতায় থাকা গরিবরা ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষের হাতে সুলভে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিতে খাদ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য। রেশনের সিংহভাগ খরচ কেন্দ্রীয় সরকার বহন করলেও এই খাতে প্রতি বছর প্রায় ৮,৩৩৯ কোটি টাকা মেটাতে হয় রাজ্যকে। জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা যোজনায় কেন্দ্র কিলো প্রতি চালের দাম ধার্য করেছে ৩ টাকা। এতে আরও ১ টাকা ভর্তুকি দিয়ে ২ টাকা দরে চাল বিলি করে রাজ্য। খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় রেশন ব্যবস্থা চালু রাখতে চলতি বছর বিপুল আর্থিক বোঝা বহন করতে হবে রাজ্যকে।
কাউকে যাতে অনাহারে দিন কাটাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে চালু হয়েছে খাদ্যসুরক্ষা আইন। তারই অঙ্গ হিসেবে রেশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে কম দামে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এর খরচ বহন করলেও খাদ্যশস্য সংগ্রহ এবং বণ্টনের কাজ রাজ্য সরকারই করে। দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পে কিলোপ্রতি ৩ টাকা দরে চাল বিলি করা হয়ে থাকে। ব্যতিক্রম বাংলা।
রাজ্য সরকারের নিজস্ব খাদ্যপ্রকল্প আরকেএসওয়াই-১ এবং আরকেএসওয়াই-২ রয়েছে। আরকেএসওয়াই-১-এ কিলোপ্রতি ১৩ টাকা দামে চাল এবং ৯ টাকা দামে গম পাওয়া যায়। আরকেএসওয়াই-১ গ্রাহকরা মাসে এক কিলো করে চাল ও গম পেয়ে থাকেন। আরকেএসওয়াই-২ এর অধীনে যারা রয়েছে তারা কিলোপ্রতি ২ টাকা দামে চাল এবং ২ টাকা কেজিতে গম পেয়ে থাকেন। কেন্দ্রীয় সরকার ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে দিলে এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে সময় মতো রেশনের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া রাজ্যের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে পড়বে।