বিভাজন আর ভেদাভেদের এই অস্থিরতার বিরুদ্ধে সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসি বিরোধিতায় পথে নেমেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভা, সমাবেশ, পদযাত্রার পাশাপাশি কখনও ছবি এঁকে, কখনও কবিতা লিখে আবার গান বেঁধে নিজের প্রতিবাদকে উপস্থাপন করছেন তিনি। এই বিভাজন আর ভেদাভেদের অস্থির বাতাবরণের মাঝে এবার প্রকাশিত হল তৃণমূল সুপ্রিমোর লেখা কিছু গানের সঙ্কলন ‘মাতৃবন্দনা’।
পাঁচটি গানের এই সঙ্কলনে ঠাঁই পেয়েছে ‘সুরুচি সঙ্ঘ’র দুর্গাপুজোর থিম সং। তবে সঙ্কলিত গানগুলি নিছকই থিম সং নয়, গানের লেখনীতে ছত্রে ছত্রে তৃণমূল সুপ্রিমো ফুটিয়ে তুলেছিলেন বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য, সম্প্রীতি, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এবং মা, আম্মি আর মাদারের মধ্যে কোনও ফারাক না থাকার শাশ্বত ভারতীয় বার্তা। সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসিকে কেন্দ্র করে মেরুকরণের মরিয়া প্রচেষ্টার মাঝে তৃণমূল সুপ্রিমোর ‘মাতৃরন্দনা’ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
‘মাতৃবন্দনা’য় রয়েছে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সুরুচি সঙ্ঘের জন্য লেখা মমতার গানগুলি। ২০১৫ সালে মমতা লিখেছিলেন—‘মাগো তুমি সর্বজনীন, আছো হৃদয়জুড়ে’। এই গানেই মমতা জানিয়েছিলেন, যে নামেই ডাক, মা, আম্মি আর মাদারের মধ্যে কোনও ফারাকই নেই। তৃণমূল সুপ্রিমোর সেই কথাকে সুরে বেঁধেছিলেন জিৎ গাঙ্গুলি, কন্ঠ দিয়েছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল। নন ফিল্মি গানের মধ্যে আজও প্রথমসারিতে মমতার সেই সম্প্রীতির গান। ২০১৬ সালে মমতা লিখেছিলেন-‘এই পৃথিবী একটাই দেশ…’। সেই গানে বিশ্বভ্রাতৃত্ব, গোটা বিশ্বকে একটাই পরিবার হিসেবে উপস্থাপন করে ঐক্যের কথা শুনিয়েছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে ফের মমতা লেখেন —‘বৈচিত্রের মুক্তোয় গাঁথা একতার মণিহার।’ নানা ভাষা, ধর্ম, বর্ণ আর সম্প্রদায়ের আবাসস্থল ভারতবর্ষের মূল ভাবনা, যা নষ্ট করার চেষ্টা চলছে, তাই ফুটে উঠেছিল তাঁর লেখায়। ২০১৮ সালে সুরুচির দুর্গাপুজোর থিম সং হিসেবে মমতা লিখেছিলেন—‘জয় মা জয় দুর্গা’। দুর্গতিনাশিনীর কাছে বাংলা তথা গোটা দেশের মানুষকে বিপদ থেকে বাঁচানোর আকুতি ছিল সেই গানে। কন্ঠ দিয়েছিলেন সহকর্মী ইন্দ্রনীল সেন এবং লোপামুদ্রা। আর ২০১৯ সালে মমতা লিখেছিলেন উৎসব। যে গানের মধ্যে ফুটে উঠেছিল, বাংলার চিরাচরিত প্রথা, ধর্ম যার যার উৎসব সবার।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসি বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন মমতা। পাশাপাশি গানের এই সঙ্কলন প্রকাশের মধ্যে দিয়ে অন্যরকমভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিল্পমনা তৃণমূল সুপ্রিমো।