শনিবার মোদী সরকারের বাজেটে দেখা গিয়েছে আবারও ‘বলির পাঁঠা’ হয়েছেন আমআদমিরাই। কারণ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বাজেটে আয়করের ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তকে যতটা না ছাড় দিয়েছেন তার চেয়ে বেশি সুবিধা দিয়েছেন দেশের উচ্চবিত্তদেরই। যে কর কাঠামো তিনি ঘোষণা করেছেন তাতে মূলত কাঠামোকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাজেটে আয়করের নতুন কাঠামো ও হার ঘোষণা করেছেন তিনি। তবে করদাতারা নতুন বা পুরনো— যে কোনও নিয়মে ইনকাম ট্যাক্স দিতে পারেন। তবে এতেই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। করদাতাদের প্রশ্ন, কোন নিয়মে আর্থিকভাবে সুবিধা হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরনো বা চলতি পদ্ধতিটি ভালো হতে পারে, যদি সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ানো যায়। তা না হলে নতুন নিয়মে আয়কর বাড়বে অনেকটাই।
উল্লেখ্য, নতুন নিয়মে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে কোনও কর নেই, এমনটাই ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। ৫ থেকে ৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে করের হার ১০ শতাংশ। তারপর থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর ১৫ শতাংশ। ১২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ, ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২৫ শতাংশ এবং তার উপর ৩০ শতাংশ হারে ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে করদাতাকে। তাঁরা সঞ্চয়, বিমা বা পিএফের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে যদি কোনও করছাড়ের সুবিধা না নেন, তবেই তাঁরা নতুন নিয়মে আসতে পারবেন। এদিকে, চলতি বা পুরনো নিয়মে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হয় না। আড়াই থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর পাঁচ শতাংশ। কোনও ব্যক্তির পাঁচ লক্ষ টাকা আয়ে পাঁচ শতাংশ হারে ১২ হাজার ৫০০ টাকা আয়কর দেওয়ার কথা।
কিন্তু আয়কর আইনের ৮৭এ ধারায় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত সরাসরি ছাড় পাওয়া যায়। তাই চলতি নিয়মে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর লাগে না। কিন্তু যদি কারও আয় পাঁচ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে তিনি ওই ধারায় কোনও ছাড় পাবেন না। দেখা যাক, আয়কর প্রদানে সুবিধা কোথায়। মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্সের প্রত্যক্ষ কর সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অরবিন্দ আগরওয়ালের কথায়, আয়করের ছোটখাট আইনি শর্ত সরিয়ে রেখে সহজ হিসেব কষা যাক। ধরা যাক, কোনও ব্যক্তির আয় বছরে ৬ লক্ষ টাকা। তিনি দেড় লক্ষ টাকা সঞ্চয় করেন। আয়কর আইনে ৫০ হাজার টাকা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাবদ ছাড় পান। গৃহ ঋণে বছরে এক লক্ষ টাকার সুদ দেন। পুরনো নিয়মে ওই তিনটিতে তিন লক্ষ টাকা ছাড় মিলবে। তাহলে তাঁর নিট আয় দাঁড়াল তিন লক্ষ টাকা। পুরনো নিয়মে তাঁকে কোনও আয়কর দিতে হবে না।
কিন্তু নতুন নিয়মে তাঁকে এক লক্ষ টাকার উপর ১০ শতাংশ হারে ১০ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। ধরা যাক, কোনও ব্যক্তির আয় আট লক্ষ টাকা। পুরনো নিয়মে তিন লক্ষ টাকা ছাড় মিললে, তাঁর নিট আয় দাঁড়াবে পাঁচ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রেও কোনও কর নেই। কিন্তু নতুন নিয়মে তাঁকে প্রথম পাঁচ থেকে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য আড়াই লক্ষ টাকার উপর ১০ শতাংশ হারে ২৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। আবার ৭.৫ থেকে ৮ লক্ষ টাকা আয়ের জন্য পরবর্তী ৫০ হাজার টাকার উপর ১৫ শতাংশ হারে সাড়ে সাত হাজার টাকা কর দিতে হবে। এক্ষেত্রে মোট কর হবে ৩২ হাজার ৫০০ টাকা।
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট স্মরজিৎ মিত্রের কথায়, যাঁরা সঞ্চয় বা বিমা করবেন না, নতুন নিয়মে তাঁরাই লাভবান হবেন। আমাদের দেশে বিমা, স্বাস্থ্যবিমা, পেনশন সহ সামাজিক সুরক্ষাগুলির খরচের ভার অনেকটাই বহন করতে হয় সাধারণ মানুষকে। অথচ উন্নত দেশে সরকারই তার বেশিরভাগটা বহন করে। সঞ্চয় বা বিমায় কর ছাড়ের সুযোগ করে দিয়ে সরকার সামাজিক সুরক্ষায় একপ্রকার বাধ্য করছিল করদাতাদের। এবার তা ধাক্কা খাবে। আবার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নারায়ণ জৈন বলছেন, কোনও ব্যক্তি কোনও করছাড় না নিলে, ১৫ লক্ষ টাকার আয়ে পুরনো নিয়মে আয়কর দাঁড়ায় ২ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা। কিন্তু নতুন নিয়মে তাঁর কর দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। অথচ যদি ওই ব্যক্তি সঞ্চয় প্রকল্প সহ বিভিন্ন ছাড়গুলি নেন, তাহলে পুরনো নিয়মে তিনি ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা কম কর দেবেন। তাঁর প্রশ্ন, তাহলে নতুন নিয়মে লাভ কার?