সিএএ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে তৎপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনে ছাত্রযুবদের অনুপ্রাণিত করতে নেতাজি ইন্ডোরে সভা ডাকা হয়েছিল সোমবার। সিএএ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম থেকেই সামনের সারিতে আছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের অভিনন্দন জানাতে নেতাজি ইন্ডোরে সভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সরস্বতী পুজোর পর সিএএ বিরোধী আন্দোলনের তেজ আরও বাড়বে। আগামীদিনে ছাত্রযুব নেতৃত্ব তৈরির কাজ শুরু হবে। সিএএ বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতে ছাত্রযুবরা আছেন। এই সভা থেকে তাঁদেরই অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে যখন ছাত্র রাজনীতি করতেন, সেই সময়ের অভিজ্ঞতাও এদিন শোনান তিনি। তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতির সময়ে বোমা বন্দুক নিয়ে তাড়া করেছিল সিপিএম। পালানোর সময়ে দোকানে ঢুকিয়ে নিয়ে বাঁচিয়েছিল স্থানীয়রা। একটার পর একটা আন্দোলন করেছি, আমরা যেমন আন্দোলন করেছি পৃথিবীতে তা আর কেউ করেনি, দুর্ভাগ্য, সকলে জানে না।’ এদিন কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন মমতা। তিনি বলেন, ‘সব ধর্ম–বর্ণ–জাতিতে নিয়ে এখানে চলতে হয়। সমাজে হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান সকলে আছে। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। আমরা সবাইকে নিয়ে চলি। আমরা ক্রীতদাস নই। ভারতের নাগরিক। ছাত্রছাত্রীদের চায়ের দোকানে গিয়ে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হবে। বিজেপি ভুল বোঝাচ্ছে। আমরা ভারতে দাসখত দিয়ে আসিনি, আমরা বন্ডেড লেবার নই, আমরা ভারতের নাগরিক।
বিজেপি ঠিক করবে কে চিঁড়ে খাবে? কেন চায়ের দোকানে গিয়ে সিএএ প্রচার করতে হবে? কেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হবে? একটা রংয়ের ওপর ভিত্তি করে দেশ চলে না। সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে, তৃণমূল তখন জেগে থাকে। যখন দেখবেন মা বোনেরা কোনও বিষয়ে রিয়্যাক্ট করছে, শিশুরা রিয়্যাক্ট করছে তখন জানবেন, তারা ঠিক। আমরা প্রথম থেকে সিএএ বিরোধী। প্রথম দিন যে কথা বলব, শেষ দিনও সে কথা বলব। ১০ বছর আগেও অনেকে বাড়িতে জন্মাত, তারা কাগজপত্র কোথায় পাবে? আইন হয় ফিরিয়ে নাও, নাহলে সংশোধন কর। বিজেপি কোথাও কোথাও বলছে, আধার কার্ড নম্বর বিজেপির দলীয় অফিসে জমা দিয়ে যাও। অভিনন্দন যাত্রা না, ওটা বিসর্জন যাত্রা। কীসের অভিনন্দন, কাকে অভিনন্দন? গুন্ডাগিরি করে আন্দোলনে বিশ্বাস করি না। কিছু করতে গেলে ভেবেচিন্তে করবেন, মাথা গরম করবেন না। ছাত্রযৌবনের রক্ত গরম, তা লাগাতে হবে দেশের ভাল কাজে, দাসত্ব করার জন্য নয়। ধর্মতলায় অবস্থায় আজ পর্যন্ত মেয়েরা চালাবে, কাল থেকে নামবে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস। এয়ার ইন্ডিয়া, অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি, রেল সব বেচে দিচ্ছে। লক্ষ লক্ষ লোক এখন বেকার। প্রশ্ন করলে হয় গুলি করে দিচ্ছে, না হলে ভয় দেখাচ্ছে, জেলে পাঠিয়ে দেব। ৩১ তারিখ থেকে আবার ছাত্ররা আন্দোলনের দায়িত্ব নেবে, ১, ২ ফেব্রুয়ারি ব্লকে ব্লকে আন্দোলন, মিটিং, মিছিল হবে। ৫, ৬, ৭ তারিখ হবে নীরব পোস্টার মিছিল। ৫ তারিখ ব্লকে ব্লকে মানব বন্ধন। যতদিন না আমি বলব আন্দোলন চলবে। ১০-১৩ তারিখ বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝান। প্রত্যেক পড়ুয়া ১০০০ করে বাড়িতে যান।’
অর্থনীতি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের জিডিপির থেকে এ রাজ্যের জিডিপি অনেক ভাল। সব রাজ্যের থেকে আমরা এগিয়ে। এই ৮ বছরে রাজ্যে কমেছে ৪০ শতাংশ বেকারত্বের হার। এ রাজ্যে আরেকটা সিলিকন ভ্যালি তৈরি হবে। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে চাকরি পাবে।’