ডার্বি জয়ের পর থেকেই আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। আর সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই নেরোকাকে তাদেরই ঘরের মাঠে হারিয়ে আইলিগ জয়ের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেল কিবু ভিকুনার মোহনবাগান। চলতি আইলিগে ডার্বি জেতার পরেই মণিপুরের মাঠে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন কিবু ভিকুনার ছেলেরা। সমর্থকদের আশঙ্কা ছিল, পাহাড়ে ডার্বির ক্লান্তি না চেপে বসে। কিন্তু আদতে দেখা গেল উল্টো ছবি। ডার্বির থেকেও বেশি ছন্দে খেললেন বেইতিয়া, নওরেমরা। পুরো ম্যাচের গতি নিয়ন্ত্রণ করলেন। কখনও গতি বাড়িয়ে গোল তুলে নিলেন। তো সুবিধে মতো গতি কমিয়ে নেরোকার ছন্দ নষ্ট করে দিলেন। নওরেম, বাবা ও তুরসুনভের গোলে নেরোকাকে হারিয়ে পাহাড় জয় করল বাগান।
বাগান কোচ কিবু ভিকুনার ফুটবল দর্শন হল প্রেসিং ফুটবল খেলা। যখন নিজেদের পায়ে বল থাকে, তখন যত পারো পাস খেলো। ছোট ছোট পাসে বিপক্ষের বক্সে ঢোকার চেষ্টা করো। আর বল বিপক্ষের পায়ে থাকলে প্রেস করো। যাতে তাড়াতাড়ি পাস করতে গিয়ে বিপক্ষ ভুল করে। সেই ছবিই দেখা গিয়েছিল ডার্বিতে। আর এদিন নেরোকার বিরুদ্ধেও সেই একই ছবি দেখা গেল। মণিপুরের ইম্ফলের অ্যাস্ট্রোটার্ফের মাঠে শুরু থেকেই বাগানের সেই পাসিং ফুটবল। মাঝমাঠে বেইতিয়া, ফ্রান গঞ্জালেজ, নংদম্বা নওরেম, শেখ সাহিলের পায়ে একের পর এক আক্রমণে উঠছিল বাগান। সামনে এদিন অনেক বেশি সপ্রতিভ দেখাচ্ছিল পাপা বাবাকার দিওয়ারাকে। বোঝা যাচ্ছিল, ডার্বিতে গোল করার ফলে তাঁর আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়েছে।
শুরু থেকেই চাপ বাড়তে থাকে নেরোকা বক্সে। ডিফেন্স সজাগ থাকায় গোল আসেনি। ২৭ মিনিটের মাথায় সেই ডিফেন্সে ফাটল ধরল। বাঁ’দিক দিয়ে বেইতিয়ার ক্রস ধরে বক্সের মধ্যে মাইনাস করলেন ধনচন্দ্র সিং। সেই বল নেরোকার বিদেশি গোলকিপার ফিলিপ ফিস্ট করলে ফিরতি বল প্রথম পোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন নংদম্বা নওরেম। তারপরেও পরপর তিনটে কর্নার থেকে গোল বাড়িয়ে নিতে পারত বাগান। কিন্তু ফিলিপের হাতে সব আক্রমণ আটকে যায়। বক্সের বাইরে থেকে বাবার বুলেট ফ্রিকিক দারুণ বাঁচান ফিলিপ। অন্যদিকে সমতা ফেরাতে পারত নেরোকাও। ফ্রিকিক থেকে ফ্রি হেড মিস করেন নেরোকার স্ট্রাইকার দিয়ারা।
দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে বাগান। সেই একই প্রেসিং ফুটবলের সুফল মেলে। ৫৩ মিনিটের মাথায় বাঁ’দিকে বল ধরে দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের মধ্যে ক্রস রাখেন নওরেম। ডার্বির কায়দাতেই হেডে গোল করে ব্যবধান বাড়ান বাবা। পরপর দু’ম্যাচে দু’গোল করলেন এই স্ট্রাইকার। তারপরেও আক্রমণ করতে থাকে মোহনবাগান। বেশ কিছু সুযোগ অল্পের জন্য নষ্ট হয়। অন্যদিকে ডিফেন্সেও ভাল খেললেন ড্যানিয়েল সাইরাস ও ফ্রান মোরান্তে। নেরোকার কিছু আক্রমণ ঠান্ডা মাথায় আটকান তাঁরা। দু’গোলে এগিয়ে থাকার পরেই খেলার গতি কমিয়ে দেয় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। যদিও তার মধ্যেই দু’একটা আক্রমণ হয় নেরোকার। কিন্তু গোল আসেনি।
৮৭ মিনিটের মাথায় ফের গোল পেয়ে যেতে পারতেন শুভ ঘোষ। বেইতিয়ার লং থ্রু ব্যাক হিল করে শুভর জন্য সাজিয়ে দেন বাবা। শুভর শট একটুর জন্য বেরিয়ে যায়। তারপরেও সুযোগ নষ্ট হয়। শেষ মুহূর্তে বাগান জার্সিতে নিজের প্রথম গোল করেন নতুন বিদেশি তুরসুনভ। বাগান স্ট্রাইকাররা সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে অন্তত ৬-০ গোলে জিততে পারতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলেই ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। এদিন বাগানের প্রতিটা আক্রমণ শুরু হল শঙ্কর রায়ের পা থেকে। তারপর ছোট ছোট পাসে নিজেদের মধ্যে খেলে কখনও থ্রু, কিংবা কখনও দুই প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠলেন সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। ডার্বিতে ৬৫ মিনিটের পর যেমন বাগান টিমটা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, এদিন তেমন হল না।