এনআরসি-সিএএ-র মতো এনপিআর নিয়েও প্রথম থেকেই সরব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বুধবারই রানি রাসমণি রোডে টিএমসিপির ধর্নামঞ্চ থেকে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, ‘ওরা সরকার ভেঙে দিলে দিক। কিন্তু কেন্দ্রের ডাকা এনপিআর বৈঠকে যাবে না বাংলা।’ যেমন কথা, তেমন কাজ। আজ কেন্দ্রের ডাকা এনপিআর বৈঠকে সমস্ত রাজ্যের প্রতিনিধিরা যোগ দিতে গেলেও, বাংলার তরফে কোনও প্রতিনিধি পাঠালেন না মমতা। অন্যদিকে, মুখে বিরোধিতা করলেও বৈঠকে হাজির থাকল পিনারাই বিজয়নের রাজ্য কেরালা। ভোলবদল দেখা গেল কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলিরও।
প্রসঙ্গত, এনআরসি ও সিএএ-র সঙ্গে এনপিআরের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিল বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য ছিল, এনপিআরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পরে সেই তথ্য কাজে লাগানো হবে নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসিতে। প্রথমেই সুর চড়ান মমতা। বাংলায় স্থগিত করে দেওয়া হয় এনপিআর। একই পথ অবলম্বন করে বামশাসিত কেরালাও। বুধবার যখন এনপিআর চালু করা নিয়ে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলি-সহ সমস্ত রাজ্য। তখনও অনড় থেকেছে বাংলা ও কেরালা। ওইদিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, দিল্লীতে এনপিআর বৈঠকে থাকবে না বাংলা। সেই মতো এদিন বৈঠকে নেই বাংলার কোনও প্রতিনিধি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা দিল্লী উড়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছিল জল্পনা। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম অভিযোগ করেছিলেন, চুপিসারে এনপিআর বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন রাজ্যের একাধিক আমলা। কিন্তু দেখা গেল, সবাইকে চমকে দিয়ে বৈঠকে হাজির হয়েছে বামশাসিত কেরালাই। বৈঠকে থাকার কথা অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন কেরালার মুখ্যসচিব কেআর জ্যোতিলাল।
বিরোধিতা করেও কেন বৈঠকে হাজির থাকল বাংলা বাদে অন্যান্য অবিজেপি রাজ্যগুলি? বিরোধীদের যুক্তি, এনআরসি আসামের জন্য। এনপিআর চলমান প্রক্রিয়া। ১০ বছর অন্তর অন্তর হওয়ার কথা। ইউপিএ জমানায় ২০১০ সালে হয়েছে। পরে সংশোধন করা হয়েছে ২০১৫ সালে। জনগণনা করতেই হবে। এনপিআরের বিরোধিতা করছে না কেউ। কিন্তু এনপিআরের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে তথ্যপঞ্জী তৈরি করে তা এনআরসিতে ব্যবহার করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারের আসল উদ্দেশ্যটা ধরতে হবে। তবে মুখে যাই বলুক না কেন, এনপিআর নিয়ে বিরোধীরা যে অনেকটাই নমনীয় হয়েছে আজকের বৈঠকেই তা স্পষ্ট। অন্যদিকে, কেরালা ও কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলির ভোলবদলেও নিজের অবস্থানে অনড় থেকে বাংলা-সহ গোটা দেশের এনপিআর বিরোধীদের মন জিতে নিয়েছেন মমতা।