রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রেশন ব্যবস্থাকে ঢেলে জানানোর ওপরে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ব্যবস্থায় দুর্নীতি রুখতে গত কয়েক বছরে একের পর এক পদক্ষেপ করা হয়েছে। রেশন কার্ডের ক্ষেত্রেও একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। এবার রেশন ব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা আনতে বড় পরিবর্তনের পথে হাঁটল রাজ্য। এবার থেকে আর সপ্তাহে সপ্তাহে নয়, একদিনেই পুরো মাসের পণ্যসামগ্রী দেওয়া হবে রেশন দোকানগুলি থেকে। বৃহস্পতিবার বর্ধমানে এক কর্মসূচীতে যোগ দিতে এসে এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি রেশন দোকানে বিশেষ ইলেকট্রনিক যন্ত্র বসানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, তাতে আঙুলের ছাপ দিয়ে প্রতিটি পরিবারের সকল সদস্য নথিভুক্ত করে নেবেন। রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার লিংক হয়ে যাবে। এরপর পরিবারের যে কোনও একজন সদস্য রেশন দোকানে গিয়ে আঙুলের ছাপ দিয়ে রেশন তুলতে পারবেন। তবে আগের মতো আর প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে নয়, বরং একদিনেই সারা মাসের রেশন তুলে নিতে পারবেন দোকান থেকে।’ বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কার করে বললে একটি পরিবার মাসে একদিন গিয়েই সারা মাসের সামগ্রী তুলে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতেই এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, দারিদ্রসীমার উপরের পরিবারদের জন্য সস্তার চাল, গম, বরাদ্দ নেই। কাজেই চিরাচরিত যে রেশন কার্ড, তারও প্রয়োজন ফুরিয়েছে। পরিবর্তে স্বচ্ছল পরিবারগুলিকে দেওয়া হবে ভর্তুকিহীন ডিজিটাল রেশন কার্ড, যা কি না সরকারি পরিচয়পত্রের ভূমিকা নেওয়ার পাশাপাশি গণবণ্টন বহির্ভূত গেরস্থালির জিনিসপত্র কিছুটা ছাড়ে কেনার সুবিধাও দেবে। নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা সেই ডিজিটাল রেশন কার্ড দিয়েই এবার গ্রাহকরা সারা মাসের রেশন একদিনে তোলার সুযোগ পাবেন। মাসে একদিন রেশনে পণ্য দেওয়ার ব্যাপারে খুব শীঘ্রই রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চলেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। এই ব্যবস্থার ফলে রেশন গ্রাহকরাই উপকৃত হবেন বলে দাবি তাঁর।
এ বছর গোটা রাজ্যে ৫২ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান জ্যোতিপ্রিয়। এখনও পর্যন্ত সাড়ে ১২ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, রাজ্যের যে রাইস মিলগুলি এবার সরকারকে চাল দেয়নি এবং যেসব রাইস মিলের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং মামলা চলছে, আগামী এক মাসের মধ্যে সেই রাইসমিল গুলি সরকারকে প্রাপ্য চাল দিলে তাদের ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। খাদ্যমন্ত্রী জানান, বর্ধমানে এই ধরনের রাইস মিলের সংখ্যা প্রায় ৮টি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি বাম আমলে প্রচুর ভুয়ো রেশন কার্ড তৈরি হয়েছিল। সেই কার্ড বাতিলের প্রক্রিয়া এখন ধারাবাহিক ভাবে চলছে। মূলত, রেশনের পণ্য নিয়ে দুর্নীতি এবং রেশনের পণ্য পাচার আটকাতেই ধারাবাহিকভাবে ওই কাজ চালানো হচ্ছে।