সন্ত্রাস ইস্যুতে বরাবরই একে অন্যের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত দুই দেশ। পুলওয়ামায় জঙ্গী হানা, বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযান, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ এবং সর্বশেষ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে সেই তিক্ততা চরমে উঠেছে। সম্পর্কের এমন উত্তপ্ত আবহেই ইমরান খানকে আমন্ত্রণ জানাতে চলেছে মোদী সরকার। আর এই আমন্ত্রণ ফের জন্ম দিয়েছে নয়া বিতর্কের। বলা হচ্ছে যে দেশের সঙ্গে এত বিরোধিতা সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কি করে ভারতে আমন্ত্রণ জানানো হয়? তাহলে কি মোদীর পাক বিরোধিতা কেবলমাত্র লোক দেখানো?
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ হওয়ার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে টানাপোড়েন অব্যাহত। তার মধ্যেই সিএএ পাশ হয়েছে সংসদে। যা নিয়ে ভারতের উপর আরও ক্ষুব্ধ হয়েছে পাকিস্তান। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক এতোটাই শীতলতায় পৌঁছে গিয়েছে যে ২০২০ সালের প্রথম দিন অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেও পাকিস্তানের নামোল্লেখ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রশ্ন উঠছে এই নিয়েও। যাকে নতুন বছরের শুভেচ্ছাটুকু অবধি জানাননি তাকে দেশে আমন্ত্রণ কি করে করছেন?
বৃহস্পতিবার ইমরানের ভারত সফরের কথা জানালেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বললেন, এবছরের শেষে দিল্লীতে আয়োজিত হবে বার্ষিক সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনে অংশ নেবে আট সদস্য দেশ এবং চার নজরদার দেশ। সদস্য দেশের মধ্যে অন্যতম পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ওই সম্মেলনে এসসিওর কর্মসূচি, বহুজাতিক অর্থনীতি এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। ২০১৭ সালে চীন নেতৃত্বাধীন এসসিও–য় যুক্ত হয় ভারত এবং পাকিস্তান। আঞ্চলিক অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা নিয়েই আলোচনা হয় ওই শীর্ষ সম্মেলনে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনীতি বিষয়ক আট সদস্যের সংগঠন এসসিও-র নেতৃত্বে রয়েছে চিন। সদস্য দেশ হিসেবে ২০১৭ সালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। সংগঠনে রয়েছে চার পর্যবেক্ষক দেশ— আফগানিস্তান, বেলারুশ, ইরান ও মঙ্গোলিয়া। এ ছাড়া আলোচনার অংশীদার ৬টি দেশ হল আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, কম্বোডিয়া, নেপাল, তুরস্ক ও শ্রীলঙ্কা। সম্মেলনের প্রথা মেনে এই সব দেশের প্রতিনিধিদেরই আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে সূত্রের খবর।
কিন্তু প্রশ্ন হল পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি আসবেন? পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা থেকে শুরু করে একের পর এক ঘটনায় ভারত-পাক সম্পর্ক যে তিক্ততায় পৌঁছেছে, তাতে ইমরানের ভারত সফরের সম্ভাবনা খুব কম বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সব সময় ভারত-বিরোধিতা করেন ইমরান। ভারতও সুযোগ পেলেই পাকিস্তানকে সন্ত্রাসে মদতের প্রশ্নে আক্রমণ করে। তা ছাড়া পাক রাজনীতিতে ভারত-বিরোধিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সে ক্ষেত্রে ভারতে এলে তা নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে পারেন ইমরান। সেই ঝুঁকি উপেক্ষা করা ইমরানের পক্ষে কতটা সম্ভবপর, তা নিয়ে সন্দিহান কূটনৈতিক মহল।