বেশ কয়েকদিন ধরেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্না দিচ্ছে তাঁর দলের ছাত্র শাখা। নিয়ম করে তিনি যাচ্ছেন রাণী রাসমণি রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সেই ধর্নামঞ্চে। আর সেই মঞ্চ থেকে প্রায় প্রতিদিনই সিএএ নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন। তবে, এবার অনেকটাই ব্যক্তিগত স্তরে নিয়ে গেলেন সেই প্রতিবাদের ধরন।
নামের সঙ্গে পদবি সমাজকে বিভাজিত করে। তাই পদবিকে গুরুত্ব দিতে চান না তিনি। বৃহস্পতিবার ধর্নামঞ্চে হাজির হয়ে এমনই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘এত কিছু ওরা জানতে চায়, অথচ আমি তো অভিষেকের বউয়ের পদবি জানি না, জানার প্রয়োজনও মনে করি না। আমার গাড়ির সারথীর পদবিও জানি না। প্রশাসনে আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কারও পদবি আমি জানি না। জানতে চাই না।’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ছিল টিএমসিপির ধর্নার সপ্তম দিন। সেখানে হাজির হয়ে গতকাল মমতা বলেন, অভিষেকের স্ত্রী পাঞ্জাবি, সেটুকুই জানি। ওর টাইটেল জানতে চাইনি। এমনকী তাঁর গাড়ির চালকের নাম জানলেও পদবি জানা নেই। প্রশাসনিক আধিকারিকদেরও টাইটেল নিয়ে মাথা ঘামাইনি কোনওদিন। সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। মমতার তৈরি করে দেওয়া ‘আমরা সবাই নাগরিক’ স্লোগানকে অস্ত্র করে তৃণমূলের এই ধর্না শুরু হয়েছে। সেই স্লোগানের পটভূমিতে মমতা বলেন, জাতি-ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন নয়, এ দেশ সবার।
এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। নবান্ন, তৃণমূল ভবন এবং তাঁর বাড়িতে মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম আছে। প্রতিদিন দুবেলা নিজের হাতে সেই মাছেদের খাবার দেন মমতা। পোষ্য মাছগুলোরও কোনও পদবি হয় কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেও সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, শতাধিক মাছ রয়েছে, তাদের কী টাইটেল তা কি কেউ জানে। সমাজটাও এমনই। সেখানেও সবাই একসঙ্গে থাকে। সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। সবাইকে ভালবাসতে হয়। তাই মানুষই প্রধান, তার পদবি নয়। সেই জায়গা থেকে সরে এলে আমার দুঃখ হয়।
উল্লেখ্য, টিএমসিপির ধর্নামঞ্চে এই নিয়ে পাঁচদিন হাজির হলেন মুখ্যমন্ত্রী। গতকাল মঞ্চে উঠে প্রথমেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি কোনও বক্তৃতা করবেন না। মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন ও রাজ্যসভার সদস্য দোলা সেনকে গান গাইতে বলেন। ধর্নায় অংশ নেওয়া পড়ুয়ারাও গান করেন। তাঁর কথা সুরারোপিত একাধিক গান গেয়ে শোনান ইন্দ্রনীল।
১৯৯৩ সালে যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে মানবাধিকারের দাবিতে ধর্মতলায় অবস্থান বিক্ষোভ করেছিলেন মমতা। সেই সময়ের অবস্থান মঞ্চে বসেই সেই আন্দোলনকে নিয়ে গান বেঁধেছিলেন তিনি। নিজেই সেখানে বসে সিন্থেসাইজারে সুর দিয়েছিলেন। গতকাল মমতা সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে ইন্দ্রনীলকে গানটি গাইতে বলেন। মাঝপথে গায়ককে ভুল ধরিয়ে দিতে নিজেই গেয়ে ওঠেন মমতা।
অন্যদিকে, সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ঘটনাচক্রে তারই মধ্যে নির্বিঘ্নে গঙ্গাসাগর মেলা সমাপ্ত হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, এবার রেকর্ড সংখ্যক ভিড় হয়েছিল মেলায়। ৫৫ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। অথচ একটাও অঘটনের খবর নেই। দেশের আর কোথাও এত সুষ্ঠুভাবে সরকারি খরচে কোথাও মেলা হয় না বলে জানিয়েছেন তিনি।
এবারের মেলায় ৪০ জন ভূমিষ্ঠ হয়েছে। নিরাপদে সেইসব শিশুদের নিয়ে তাঁদের মায়েরা ফিরে যেতে পেরেছেন। এ নিয়ে আবেগের সুরে মমতা বলেন, ‘গঙ্গাসাগরে এসে সন্তান জন্ম দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার মতো সুখানুভূতি আর কিছু আছে নাকি!’ আবার গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও সুর চড়িয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এত বিপুল আয়োজনে কেন্দ্র এক পয়সাও সাহায্য করেনি।