‘যাঁরা দেশের নানান প্রান্তে পড়ুয়াদের পেটাচ্ছেন, তাঁরা জানেন না যে এসবের পর আমাদের শিড়দাঁড়া আরও শক্ত হয়ে উঠছে’। সিএএর বিরুদ্ধে দেশে জুড়ে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছেই। যাদবপুর থেকে জামিয়া, আলিগর থেকে জেএনইউ, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানেই যুব সমাজ কেন্দ্রীয় সরকারের সিএএর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন, তাদের হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে, এমনকি হুমকিও দেওয়া হচ্ছে দেদার। কিন্তু এতো কিছুর পর দমিয়ে রাখা যাবে না কারণ ওই যে, সায়ন সিনহার কথায়, শিরদাড়া শক্ত হচ্ছে, আর মোদী বিরোধী আওয়াজ তুলছে মানুষ। হিংসা, জাত-পাতের বিভেদ নয় মানুষ মানুষে বিশ্বাসী।
দেবব্রত নাথ বিশ্বভারতীর এক ছাত্র জানান, ‘ক্যাম্পাসের মধ্যে হস্টেলে যে এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। প্রতিদিনের মতো বুধবার রাতেও রতনপল্লিতে বন্ধুদের সঙ্গে বসেছিলাম। অংশুক মুখোপাধ্যায় নামে আমার এক বন্ধুও ছিল। তখনই জানতে পারি, অংশুকের খোঁজে কয়েক জন বুধবার সন্ধ্যায় বিদ্যাভবন হস্টেলে চড়াও হয়েছে। অংশুকের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারছিলাম, ও খুবই ভয়ে রয়েছে। এর পরে আমি অংশুককে হস্টেলে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলি। সে আমাদের আশ্বস্ত করে বলে, ‘কোনও ভয় নেই, আমি একাই যেতে পারব’। পরে ওর কোনো খবর না পেয়ে আমি ও স্বপ্ননীল ওর হস্টেলের দিকে যেতে গেলেই আমাদের আটকায় সুলভ কর্মকার। নানা প্রশ্ন করে, উত্তর না দেওয়ায় বচসা বাধে’।
এরপর সেই ছাত্র জানান, ‘তখনই অচিন্ত্য বাগদি, সাবের আলি-সহ ১০-১২ জন আমাদের উপরে চড়াও হয়। ওরা প্রথমে আমাকে উইকেট দিয়ে মারতে থাকে। পরে স্বপ্ননীলের উপরে চড়াও হয়। বিশ্বভারতীর নিরাপত্তাকর্মী ও নিরাপত্তা আধিকারিকেরা আসার পরেও তাঁদের সামনেই চলে আক্রমণ। পরে অবশ্য রক্ষীরা ওদের সরিয়ে দেন। নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়িতে পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালে আমাকে ও স্বপ্ননীলকে ভর্তি করানো হলে সেখানেও অচিন্ত্য, সাবের পৌঁছে গিয়ে আমাদের বাকি বন্ধুদের মারধর করে ও হুমকি দিতে থাকে। গালিগালাজ করা হয় শিক্ষকদেরও’।
কিন্তু এ কেমন রাম রাজত্ব চলছে দেশে? এমব প্রশ্ন তোলেন অনেক ছাত্রই। তারা জানান, গণতান্ত্রিক দেশে আমাদের বাক স্বাধীনতা নেই! মত প্রকাশ করতে গেলেই, আর তা মোদী বিরোধী হলেই ছাত্রসমাজকে মার খেতে হচ্ছে বিজেপির গুণ্ডাবাহিনীর হাতে! এমন পরিস্থিতি দেশ জুড়ে অব্যাহত।
সায়ন সিনহা যাদবপুরের ছাত্র হলেও বোলপুরের বাসিন্দা, স্বপ্ননীল ও দেবব্রতর উপর হামলা হয়েছে শুনে বন্ধুদের হাসপাতালে দেখতে যান। সেখানেও এবিভিপির সমর্থকরা গিয়ে হামলা করেন। সায়ন জানানা, “আমাকে ও আমাদের দুই বন্ধু অমিত ও ফাল্গুনীর কলার ধরে টানা হ্যাঁচড়া করতে থাকেন। অচিন্ত্য বাগদির হাতে আধভাঙা টিউব। মত্ত অবস্থায় চিৎকার করতে করতে বলতে থাকেন, ‘কে মারবি আমায়? এখানে থাকতে হলে হাটতলা পেরিয়ে তো যেতেই হবে, তখন দেখে নেব সবাইকে’। এরসঙ্গে চলতে থাকে কুৎসিত কিছু গালাগাল। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীকে কিছু ব্যবস্থা নিতে বললে তাঁরা আমাদের চুপ করতে বলেন”।