আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার বুলি আউড়িয়ে দেশবাসীকে যে স্বপ্নের ফানুসে চড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এক বছর পেরনোর আগেই যে তা ফুটো হয়ে গিয়েছে, সে কথা স্পষ্ট। কারণ প্রায় রোজদিনই তলানিতে নামার নতুন নতুন রেকর্ড করে চলেছে দেশের অর্থনীতি। তবে এবার সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে বিগত ৬ বছরের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির হার সর্বোচ্চ শিখর স্পর্শ করেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৩৫ শতাংশ। নভেম্বর যা ছিল ৫.৫৪ শতাংশ। যার অর্থ, মাত্র এক মাসে খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ১.৮১ শতাংশ।
সোমবার জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর (এনএসও) প্ৰকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ডিসেম্বর মাসে শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪.১২ শতাংশ হারে। অথচ এক বছর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তা ছিল -২.৬৫ শতাংশ। শুধু তাই নয়, নভেম্বরে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১০.০১ শতাংশ। আর সব্জির দাম অবিশ্বাস্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। সব্জির মুদ্রাস্ফীতির হার ৬০ শতাংশেরও বেশি। কোর সেক্টরের মুদ্রাস্ফীতির হার ৩.৭ শতাংশ। হাউজিং সেক্টরের মুদ্রাস্ফীতির হার সাড়ে ৪ শতাংশ। এভাবে বছরের শুরুতেই ডিসেম্বর মাসের মুদ্রাস্ফীতির হার সংক্রান্ত রিপোর্ট সরকারকে যে ধাক্কা দিয়েছে সেটা বড়সড় উদ্বেগের বিষয়।
বস্তুত ইউপিএ সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারের সব থেকে বড় যে পার্থক্য বিগত ৬ বছরে ধরে পরিলক্ষিত হয়েছে সেটি হল, মূল্যবৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণ। মোদী সরকারের আর্থিক সঙ্কট ক্রমবর্ধমান হলেও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল। তবে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সেটাও উর্ধ্বমুখী। রিপোর্ট অনুযায়ী, শেষবার এই সাড়ে ৭ শতাংশ হারের মুদ্রাস্ফীতি দেখা গিয়েছিল ২০১৪ সালে। প্রথম বারের জন্য কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে ৭.৩৯ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। তার পরে অবশ্য তা কমতে থাকে। এবার ফের সেই সূচক বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে, অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণেও কেন্দ্র ব্যর্থ হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে ২০২০-২১ আর্থিক বছরের সাধারণ বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। তার ঠিক কয়েক দিন পরে ৬ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরবর্তী মুদ্রা নীতি ঘোষণা করবে। কিন্তু এভাবে দ্রব্যমূল্য লাগাতার তিনমাস ধরে ক্রমেই উর্ধ্বমুখী হওয়ায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে রেপো রেট কমানোর সম্ভাবনা আবার ধাক্কা খেল বলেই মনে করা হচ্ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ন’মাস ধরে রেপো রেট ক্রমাগত কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিসেম্বর মাসের রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখা হয়। কমানো হয়নি।
আসলে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে ফেব্রুয়ারি মাসে আবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মনিটারি পলিসি কমিটির বৈঠকে রেপো রেট কমতে পারে। কিন্তু যেভাবে মূল্যবৃদ্ধির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে, তারপর সেই সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ বাজারে টাকা আসার সম্ভাবনাও কম। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছিল, আর্থিক বছরের শেষ চার মাসে ৪ শতাংশের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হবে মুদ্রাস্ফীতির হার। সেই লক্ষ্যপূরণ তো সম্ভবই নয়। বরং ক্রমেই মুদ্রাস্ফীতির হার ৮ শতাংশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সুতরাং অর্থনীতির সঙ্কট কমার লক্ষ্মণ নেই, বরং তার সঙ্গেই নতুন করে নিয়ে এসেছে মূল্যবৃদ্ধির ভ্রুকুটি।