রাজ্য সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তাতে রাজ্যপালের ‘আন্তরিকতা’ থাকতে হবে। ‘জোর খাটালে’ চলবে না- যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কথা বলতে চেয়ে রাজ্যপাল যে চিঠি দিয়েছিলেন, তার জবাব দিতে গিয়েই এবার স্পষ্ট এ কথা জানিয়ে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ঢুকতে না পেরে শিক্ষা সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চেয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সেই চিঠির জবাবও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে দেন রাজ্যপাল। তাই এবার যাদবপুর সম্পর্কে সরকারের মত জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া মারফতই ধনকরকে কড়া চিঠি দিলেন শিক্ষামন্ত্রী। চিঠির প্রথমেই তিনি এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিঠি প্রকাশ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু জানতে চেয়েছেন। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার মারফতই আপনাকে চিঠি দেওয়া।’
বর্ষশেষের শুভেচ্ছা-সহ পার্থ লিখেছেন, ‘২৫ ডিসেম্বর আপনি মুখ্যমন্ত্রীকে যে চিঠি লিখেছেন, তার প্রেক্ষিতে বিষয়গুলি সম্পর্কে আপনাকে জানাতে মুখ্যমন্ত্রী আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন। বিষয়গুলি হল, রাজ্য সরকারের অনুদানপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অনুষ্ঠান বাতিল এবং ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। আপনাকে অবগত করা হয়েছে, যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে সেসব অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ স্থির করা, অনুষ্ঠানসূচী তৈরি এবং তা বাতিল করা— সবটাই হয়েছে রাজ্যপালের তৈরি করা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
শিক্ষামন্ত্রী এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে তৈরি নিয়মকানুনকে ভিত্তি মেনে রাজ্য সরকার তাদের কাজকর্মে ও দায়িত্বপালনে হস্তক্ষেপ প্রায় করেই না।’ তিনি লিখেছেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হবে, কেন্দ্রের প্রস্তাবিত এনআরসি, সিএএ এবং এনপিআর কার্যকর করার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। তাদের ক্ষোভও জানাচ্ছিল। ছাত্রছাত্রীরা ও এ রাজ্যের মানুষ এই সবকিছু প্রত্যাহারের দাবি করছে এবং বাংলায় তা কার্যকর করার তীব্র বিরোধিতা করছে।’
পার্থ রাজ্যপালকে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, ‘আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী আমরা সব সময় একসঙ্গে কাজ করতে তৈরি।’ কিন্তু তারই পাশাপাশি তিনি লিখেছেন, ‘আপনার মনোভাব হতে হবে আন্তরিক। জোর করা চলবে না। রাজ্য শিক্ষা দফতরের স্বার্থে কাজ হবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে।’ মাধ্যমিক স্তরে সরকারের কাজকর্মের খতিয়ানও ওই চিঠির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ৬১টি স্কুল তৈরি হয়েছে। ৬৯টি মাধ্যমিক স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৬৫টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মিড-ডে মিলের জন্য ২৯১৪টি ডাইনিং হল তৈরি করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কী, কী কাজ হয়েছে, তালিকায় তাও বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৮টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, ৫০টি নতুন কলেজ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি হচ্ছে সরকারি অনুদানে ও ১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আরও ১১টি সরকারি অনুদানে বিশ্ববিদ্যালয় হবে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও তৈরি করা হচ্ছে। ২০১৩ থেকে ৬ হাজারেরও বেশি সহকারী অধ্যাপক, ২৫০ জন অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও কলেজ সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ করা হচ্ছে।