লোকসভা নির্বাচনের পরে হিড়িক উঠেছিল রাজনৈতিক দলবদলের। ভোটের ফল দেখে এবং গেরুয়া বাহিনীর হুমকির মুখে বহু নেতা-কর্মীই যোগদান করেছিলেন বিজেপিতে। কিন্তু কিছুদিন গড়াতেই সকলেই নিজেদের ভুল বুঝছেন। তাই ত্যাগ করছেন গেরুয়া সঙ্গ। গত লোকসভা নির্বাচনের পর যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলি তাদের হাতছাড়া হয়েছিল একে একে সেগুলি পুনরুদ্ধার করেছে তৃণমূল। সেই পথ ধরেই এবার ফের তৃণমূলের হাতে চলে এল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ। ৬ মাস পর বিজেপির হাত থেকে জেলা পরিষদের দখল নিল তৃণমূল। বিজেপিতে যাওয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা রায় রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ফের তৃণমূলে যোগ দিলেন। তাঁর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন দলের জেলা সভানেত্রী অর্পিতা ঘোষ। আর এই যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই জেলা পরিষদ পুরোপুরি তৃণমূলের দখলে চলে এল।
প্রসঙ্গত, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের ১৮ আসনের মধ্যে ১৮টি আসনেই তৃণমূল জয়লাভ করে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি হন লিপিকা রায়। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে দলের তৎকালীন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ ওঠে। এমনকী লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের বিরুদ্ধেও একাধিকবার মুখ খুলতে শোনা যায় বিপ্লব মিত্রকে। তারপর লোকসভা নির্বাচনে এ জেলায় তৃণমূলের ফল আশানুরূপ না হওয়ার পরই বিপ্লব মিত্রকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার জায়গায় অর্পিতা ঘোষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর গত ২৪ জুন জেলা পরিষদের ১১ জন সদস্যকে দিল্লীতে নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন বিপ্লব।
তবে ওই ১১ জনের মধ্যে প্রথমে ৫ জন ও পরে আরও ২ জন ফের তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা রায় বিজেপিতে থেকে যাওয়ায় পঞ্চায়েত আইন মেনে জেলা পরিষদের দখল নেওয়া তৃণমূলের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও জেলা পরিষদে যেহেতু বেশিরভাগ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষই বিজেপিতে ছিলেন, তাই জেলা পরিষদের কাজ থমকে যায়। বাধ্য হয়ে জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যরা কয়েকদিন আগে বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি দিয়ে কর্মাধ্যক্ষ ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। সে সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী দু’বছরের মধ্যে জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে সরানো সম্ভব নয়। তাই বিজেপি ছেড়ে সভাধিপতি লিপিকা রায়ের ফের তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ এখন পুরোপুরি তৃণমূলের দখলে চলে এল।