নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জোরদার প্রতিবাদ শুরু হয়েছে দিল্লী, কলকাতা, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে। গতকালই বেঙ্গালুরুতে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে প্রতিবাদ দেখাতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। ভাইরাল ভিডিয়োয় দেখা গেছে, সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য রাখার সময় টেনে নিয়ে যাওয়া হয় ওই বর্ষীয়ান ব্যক্তিকে। তবে ছাড়া পাওয়ার পরই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে জোরদার তোপ দেগেছেন রামচন্দ্র গুহ।
বিরোধী কণ্ঠস্বরকে অনেক সময়ই ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ বলে কটাক্ষ করা হয়ে থাকে বিজেপির তরফে। তাদের আক্রমণের ভাষাই এবার কেন্দ্রের দিকে পাল্টা ছুঁড়ে দিয়ে এক প্রথম সারির জাতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আসল টুকরে টুকরে গ্যাং-এর সদস্যরা দিল্লীতে বসে দেশ চালাচ্ছে। এরাই ভাগাভাগির মূল পাণ্ডা বলেও দাবি করেছেন তিনি।
রামচন্দ্র গুহ বলেন, ‘আসল টুকরে টুকরে গ্যাং হল তারা যারা দিল্লীতে বসে দেশ শাসন করছে। ওরাই ভাগাভাগি করার মূল পাণ্ডা। ওরা শুধু ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করছে না, ভাষার ভিত্তিতেও ভাগাভাগি করছে। তবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পথ থেকে আমরাও সরে আসছি না।’
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সত্ত্বেও পুলিশ কেন তুলে নিয়ে যাবে এখন এই প্রশ্নই জনগণের সামনে রাখছেন রামচন্দ্র গুহ। তিনি বলেছেন, ‘আমি তো ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করিনি। যদিও বেঙ্গালুরুর মতো জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করার কোনও কারণই ছিল না। আমার তো মনে হচ্ছে এটা জবরদস্তি একটা চাপ যেটা দিল্লী থেকে এসেছে। দিল্লীই বেঙ্গালুরুকে বলেছে জনগণের ওপর কৃত্রিম চাপ তৈরি করতে।’ ঠিক যেভাবে ব্রিটিশ শাসনে ১৪৪ ধারা জারি করে স্বাধীনতার কণ্ঠ চাপা দেওয়া হত। এখন একই ছবি সেই একই ভারতে দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।
নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এই প্রখ্যাত ইতিহাসবিদের মত, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন একটি মেরুকরণের আইন। আমাকে অবৈধভাবে আটক করা হয়েছিল। আমরা কী ধরণের গণতন্ত্র হয়ে উঠছি? আমি আজ পুলিশকর্মীদের প্রতি সহানুভূতি অনুভব করেছি কারণ তারা বিব্রত ছিল। কেননা তারা উপর থেকে আদেশের ভিত্তিতে কাজ করছিল। তারা জানত যে কোনও ধরণের সহিংসতার দূরবর্তী সম্ভাবনা নেই। ১৪৪ ধারা চাপানোর কোনও কারণ ছিল না।’
উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখানোর ‘অপরাধে’ বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুর টাউন হলের সামনে থেকে আটক করা হয়েছিল তাঁকে। হাতে গান্ধীজির ছবি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই প্রখ্যাত ইতিহাসবিদকে টেনে-হিঁচড়ে হেনস্থা করে বিজেপি শাসিত রাজ্য কর্ণাটকের পুলিশ। যা নিয়ে গতকাল নিন্দায় মুখর হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।