রাজ্য সরকারের সাথে রাজ্যপালের সংঘাত বরাবরই চরমে। এবার রাজ্যপালের সঙ্গে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংঘাতও প্রকাশ্যে এল। সূত্রের খবর, অধ্যক্ষকে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘কী কারণে রাজ্যপাল বিল পেশের অনুমোদন দিচ্ছেন না, সেই বিষয়টি সমস্ত নথি-সহ সদনে প্রকাশ করুন অধ্যক্ষ।’ এই দাবি সম্বলিত চিঠি পাওয়ার পরই এবার সেই চিঠির কড়া জবাব পাঠালেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
পাল্টা চিঠিতে অধ্যক্ষ রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘আপনি চিঠিতে যা করতে বলেছেন, তা অপ্রত্যাশিত। চিঠি আমার কাছে আসার আগেই তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এটা কাম্য নয়। তাছাড়া আপনার চিঠি পাওয়ার আগেই অধিবেশন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।’ পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এবিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন, চিঠি বিধানসভার অধ্যক্ষের হাতে পৌঁছানোর আগেই তা সংবাদমাধ্যমের কাছে চলে আসে। সেই নিয়ে তৈরি হয়েছিল নতুন বিতর্ক।
যদিও পার্থবাবুর অভিযোগের পরই রাজভবনের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, চিঠি অধ্যক্ষের কাছে পাঠানোর পরে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। তবে এদিন বিধানসভা অধ্যক্ষের পাল্টা চিঠিতে সেই সংঘাত আরও বাড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ওই চিঠিতে অধ্যক্ষ উল্লেখ করেছেন, এসসি-এসটি কমিশন সংক্রান্ত বিল পেশের অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল স্বাক্ষর না করায় তা নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভেরও সঞ্চার হয়েছে বিধায়কদের মধ্যে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা চেয়ে তিনি চিঠি লিখেছেন বলেও সম্প্রতি জানান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। এর ফলে রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সরকারের লাগাতার সংঘাতের পরিস্থিতিতে রাশ টানা হল বলে মনে করছিল ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। তবে গত মঙ্গলবার রাজ্যপাল-রাজ্য সরকার সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি।
রাজ্যপাল অতিসক্রিয় এবং তিনি রাজনীতি করচেঞ্জ এমনই দাবিতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে স্লোগান লিখে মঙ্গলবার বিধানসভায় প্রতিবাদ দেখান তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়করা। বিধানসভা চত্বরে আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে তাঁরা ধর্নায় বসেন। ব্যতিক্রমী ঘটনার পর দুপুরে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লেখেন রাজ্যপাল ধনকর। তারপর সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষুব্ধ রাজ্যপালের মন্তব্য, ‘নোংরা রাজনীতি চলছে। আমায় রাজনীতি করবেন না।’
তফসিলি জাতি ও উপজাতি সংক্রান্ত বিলে রাজ্যপাল সই করছেন না অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়করা। অন্যদিকে, বিধায়কদের অভিযোগ, এসসি-এসটি বিল ছাড়াও, গণপিটুনি বিল-সহ একাধিক বিল আটকে রেখেছেন রাজ্যপাল। তাঁদের কথায়, রাজ্যপাল সই না করাতেই বিলটি অধিবেশনে আনা সম্ভব হয়নি। এমনকী রাজ্যপালের ভূমিকার নিন্দা করে রাজ্যসভাতেও বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের সাংসদরা। পরে ওয়াকআউটও করেন তাঁরা। সেই ঘটনার পরই অধ্যক্ষকে চিঠি লেখেন রাজ্যপাল। জানা গেছে, সেই চিঠির জবাবিতেই রাজ্যপালকে কড়া জবাব দিলেন অধ্যক্ষ। এখন এই চিঠির ভিত্তিতে রাজ্যপাল কি বলেন, সেটাই দেখার।