লোকসভায় ক্যাব পাশ হয়ে যাওয়ার পর বিরোধী দলগুলি একযোগে সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের চেষ্টা করছে বিজেপি, এমনই দাবি ছিল বিরোধীদের। তারপরই সংসদেদাঁড়িয়ে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের জন্য পাল্টা কংগ্রেসকে দায়ী করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এবার তার পাল্টা দিতে গিয়ে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। তাঁর কটাক্ষ, ছেলেবেলায় ইতিহাসের ক্লাসে মনোযোগী ছিলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সোমবার অমিত শাহ লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পেশ করার সময় তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। ধর্মের ভিত্তিতে এই বিল আনা হচ্ছে বলে দাবি করে একে অসাংবিধানিক আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
তারই জবাব দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘আপনারা প্রশ্ন করছেন এই বিলের প্রয়োজনীয়তা কেন? স্বাধীনতার পর কংগ্রেস যদি ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ না করত, আজ আমাদের এই বিলের প্রয়োজন হত না।’ তিনি আরও বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ কংগ্রেসই করেছিল, বিজেপি নয়। অমিতের এই মন্তব্যের পর আরও উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদের অধিবেশন। অমিত শাহ বক্তব্য বলার সময় কংগ্রেস সাংসদরা বার বার প্রতিবাদে সরব হচ্ছিলেন। বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের অভিযোগ করছিলেন কংগ্রেস সাংসদরা। একমসময় মেজাজ হারিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শুধু সংসদেই নয়, সংসদের বাইরে অমিতের মন্তব্যের সমালোচনায় সরব হচ্ছেন কংগ্রেস সাংসদরা। অমিত শাহের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। ‘ভারতীয় রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা’ নিয়ে লোকমত ন্যাশনাল কনক্লেভে বক্তব্য রাখার সময় থারুর বলেন, ‘বিজেপি এতদিনে বুঝে গিয়েছে যে দক্ষিণের উপর হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া হলে তাঁরা তা মেনে নেবে না। একইরকমভাবে হিন্দুত্ব নিয়ে বিজেপির একরাশ এজেন্ডার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য বলে এদিন উল্লেখ করেন তিরুবনন্তপুরমের সাংসদ।
অমিত শাহ কংগ্রেসকে দায়ী করে দেশভাগের যে উদাহরণ টেনেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শশী বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি সত্যিই ইতিহাস ক্লাসে মনোযোগী থাকতেন না। স্বাধীনতা সংগ্রামের গোটা ইতিহাসে কংগ্রেসই একমাত্র দল যারা প্রত্যেকের প্রতিনিধিত্ব করেছিল এবং সর্বধর্ম সমন্বয়ের এক অখন্ড ভারতের কথা বলেছিল।’ অন্যদিকে, এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে একমাত্র যে দল অসম্মত ছিল তা হল হিন্দু মহাসভা। তাঁরাই ১৯৩৫ সালে প্রথম সিদ্ধান্ত নেয় যে হিন্দুদের ও মুসলিমদের দুটি আলাদা রাষ্ট্র হবে। একই থিয়োরি শোনা যায় মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বাধীন মুসলিম লিগের গলাতেও। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের জন্য যে কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেছিলেন, তা নেহাতই বালখিল্যতা।