বাংলায় কোনও জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় না। দেশ বা বিদেশের কেউ বলতে পারবেন না তাঁরা এ রাজ্যে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এই দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বুধবার দীঘায় বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভে ২০ টি দেশের প্রতিনিধি, শিল্পপতি, কূটনীতিবিদদের সামনে নাম না করে কেন্দ্রের এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন দীঘার শিল্প সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কেন এ রাজ্যে বিনিয়োগ করবেন তার ব্যাখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের সঙ্গে এ রাজ্যের তুলনা টানেন। মমতার কথায়, কারও সমালোচনা করা লক্ষ্য নয়, তবে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে চাই। এরপরেই তিনি এই ত্রৈমাসিকে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির অবনমন, ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারির কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি জানান, বাংলার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হয়েছে অনেক। রাজ্যে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। তিনি বলেন, কোনও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপরই ব্যবসা-বিনিয়োগ অনেকাংশে নির্ভর করে। মুখ্যমন্ত্রী দেশি বিদেশি শিল্পপতি ও কূটনীতিকদের জানান, জমির সুবিধা থেকে প্রশিক্ষিত কর্মী, আইটি পলিসি, ট্যুরিজম পলিসি, মেধাবী ছাত্র থেকে প্রশিক্ষিত কর্মীর কোনও অভাববোধ করবেন না বিনিয়োগকারীরা।
পরোক্ষে নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ বাংলায় একটি পরিবারের মতো থাকে। এখানে কোনও বিদ্বেষ বা বিভেদের জায়গা নেই। তাই দেশের শিল্পপতিদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও সবরকম সরকারি সহায়তা পাবেন। নিজেদের বিনিয়োগের আদর্শ জায়গা হিসেবে গড়ে নিতে পারবেন বাংলাকে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, বাংলায় ‘রেডিমেড বিজনেস’ প্রস্তুতই আছে, আপনাদের শুধু তা ব্যবহার করতে হবে। বিজনেস কনক্লেভে মমতা ঘোষণা করেন, ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিলে ঋণের ব্যবস্থা থেকে ১০০ দিনের কাজ, প্রতিটি ক্ষেত্রে এক নম্বরে রয়েছে বাংলা। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের প্রতিবেশী দেশগুলির থেকে এ রাজ্যের আকাশপথে দূরত্ব কম হওয়ায় এই দেশগুলির সঙ্গে বাংলার বাণিজ্য সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে পারে।
এবারে কলকাতার পরিবর্তে দীঘায় এই শিল্প সম্মেলন করার কারণ হিসেবে মমতা জানান, গত সাত-আট বছরে দীঘাকে বাংলার পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে যেভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এবং বাংলায় পর্যটন শিল্পের উন্নতির যে প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে তা শিল্পপতিদের দেখাতে চেয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন প্রতি বছর ১৬ লক্ষ বিদেশি পর্যটক আসেন এ রাজ্যে।’