১লা মে ১৯০৮ সালে, মজফ্ফরপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ. সি উডম্যানের কাছে ক্ষুদিরাম স্বেচ্ছায় বাংলা ভাষায় তাঁর স্বীকারোক্তি দেন। পরের দিন সেটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এন. সি. চৌধুরী। তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তিটি নিম্নরূপ –
“আমার নাম ক্ষুদিরাম বসু। আমার পরলোকগত বাবার নাম ত্রৈলোক্যনাথ বসু। জাতিতে আমি কায়স্থ এবং পেশায় একজন ছাত্র। মেদিনীপুরে আমার বাড়ি। মৌজা মেদিনীপুর, জেলা মেদিনীপুর। আমি মেদিনীপুরে বসবাস করি।
কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্যে আমি কলকাতা থেকে ৫/৬ দিন আগে মজফ্ফরপুরে এসে উপস্থিত হই। স্টেশনের কাছে ধর্মশালাতে আমি উঠেছিলাম। আমার সঙ্গে দীনেশচন্দ্র রায় নামে আরও একজন লোক এসেছিল। সে বলেছিল যে, সে বাঁকিপুরের লোক। আমি তাঁকে হাওড়া স্টেশনেই দেখেছিলাম, তার আগে কখনও দেখিনি। আমাদের দুজনের একরকম উদ্দেশ্য ছিল। আমরা উভয়েই একসঙ্গে যাত্রা করেছিলাম। আমি কিন্তু সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে পথে নেমেছিলাম, নানা ধরনের কাগজের সংবাদ পাঠ করে আমি উত্তেজনাবশত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এই কাগজগুলি হল ‘সন্ধ্যা’, ‘হিতবাদী’, ‘যুগান্তর’ ইত্যাদি। কাগজগুলিতে ভারতের ওপর ইংরেজ সরকারের জুলুমের কথা লেখা হত। অবশ্য কিংসফোর্ডের নাম কোথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু যেহেতু তিনি বহু লোককে জেলে পুরেছিলেন, সেহেতু আমি তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিই। আলোচনা করতে করতে তাঁদের কথাও উঠে আসে। অন্য কেউ তাঁকে এই কাজ করতে উসকানি দিয়েছিল কিনা, সে কথা আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করিনি। আমাদের ট্রেনেই হঠাৎ দেখা গিয়েছিল কিনা সে কথা আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করিনি। আমাদের ট্রেনেই হঠাৎ দেখা হয়েছিল এবং সেই সুবাদেই তাঁর সঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত। কথায় কথায় সে তাঁর উদ্দেশ্যের কথা আমাকে জানায়। আমিও আমার উদ্দেশ্যটা তাঁকে জানাই। গাড়িতে আরও অনেক সহযাত্রী ছিল। কিন্তু আমি তাঁদের কারওর সঙ্গে কথা বলিনি।
আমরা মজফ্ফরপুরের ধর্মশালায় পৌঁছে সেখানে ৪/৫ দিন থাকি এবং তাঁকে (কিংসফোর্ডকে) মারার সুযোগের বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলি। দু–একদিন বাইরে থেকে তাঁর বাড়িটিও দেখে আসি। আমরা রোজ সকালবেলা তাঁকে দেখতে পেতাম। আমি একদিন কোর্টে গিয়েও তাঁকে দেখে আসি।
আমার কাছে দুটো রিভলভার ছিল এবং আমার ইচ্ছে ছিল তার একটা দিয়ে তাঁকে গুলি করে মারি। এইগুলো হল সেই রিভলভার (প্রদর্শ নং ১ ও ২)। দীনেশের কাছে ছিল একটা রিভলভার ও একটা বোমা। সে এটা (বোমা) কলকাতা থেকেই তৈরি অবস্থায় নিয়ে এসেছিল। ধর্মশালায় বসে ওটা বানায়নি। তবে ধর্মশালায় বসে সে কী যেন করত। আমি বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এসে দেখতাম যে সে বোমাটা বার করে দেখে আবার আগের জায়গায় রেখে দিত। দীনেশ আমাকে বলেছিল যে এই বোমাগুলো কেমন করে বানাতে হয় সে তা জানে। কিন্তু বোমাটা সে কোথা থেকে জোগাড় করেছিল, সে কথা আমাকে বলেনি। বোমাটা টিন দিয়ে মোড়া ছিল এবং তার আকার ছিল প্রায় এতখানি (হাত দিয়ে প্রায় তিন–চার ইঞ্চি ব্যাসার্ধের একটি আয়তন প্রদর্শন)।
আমার পৌঁছবার দু’দিন পরে বোমাটা কাজের উপযোগী হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মশালায় একটা গ্ল্যাডস্টোন ব্যাগের ভিতরে কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে আমরা সেটাকে ঢেকে রেখেছিলাম। দিন দুই–তিন আমি বোমাটাকে একটা টিনের মধ্যে পুরে বাইরেও নিয়ে গিয়েছিলাম। দীনেশ ও আমি দু–তিনদিন সন্ধেয় বেরিয়ে জজ সাহেবের বাড়ির সামনের ময়দান দিয়ে হেঁটে এসেছিলাম। আমার তাঁকে (কিংসফোর্ডকে) দু–তিনবার দেখেও ছিলাম। কিন্তু কোনও সুযোগ পাইনি। আমরা তাঁকে (ঘোড়ার) গাড়ির ভেতরেও বসে থাকতে দেখেছি। কিন্তু সব কিছু পরিষ্কারভাবে চিনতে পারিনি।
গতকাল রাতে আমি একটা সুযোগ পেয়েই বোমাটা ছুঁড়ে মারলাম। দীনেশ ও আমি ময়দানে একটা গাছের তলায় একসঙ্গে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি দেখলাম (কিংসফোর্ডের) গাড়িটি ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসছে। আমি মনে করেছিলাম যে কিংসফোর্ডের গাড়িটা আমি সঠিকভাবে চিনতে পেরেছি। আর তাই বোমাটাও ছুঁড়ে মারলাম। (অবশ্য) এখন জানতে পারলাম যে আমার ভুল হয়েছে। কনস্টেবলরা আমাকে গ্রেপ্তার করে। আমি কিন্তু একটা বোমাই ছুঁড়েছিলাম। আমি রাস্তায় নেমে গাড়িটির কাছে ছুটে গিয়ে তার ভেতরেই এটা ছুঁড়ে মেরেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম যে জজ সাহেব বুঝি গাড়ির ভেতরেই রয়েছেন। কিন্তু আসলে সেখানে ক’জন ছিল তা আমি ভাল মতো বুঝতে পারিনি। সময়টা ছিল মোটামুটি আঁধারে ভরা। তখন আমার গায়ে ছিল এই ডোরাকাটা কোট (প্রদর্শ নং ৩)। দীনেশের গায়ে ছিল একটা সাদা রঙের সিল্কের কুর্তা (প্রদর্শ নং ৪)। কিন্তু এটা পরে থাকতে অসুবিধে হওয়ায় সে এটা গাছতলায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় গা থেকে খুলে আমায় দিয়েছিল। সে তখন একটা জামা আর চাদর গায়ে দিয়ে নেয়। আমাদের (দুজনের) পায়েই জুতো ছিল। কিন্তু বোমা ফেলার আগে আমরা গাছতলায় ওগুলো ছেড়ে রেখেছিলাম। আমি বোমা ছোঁড়ার জন্যে সবার আগে দৌড়ে গিয়েছিলাম। আর তাই দীনেশ কেমনভাবে আমার পিছু নিয়েছিল, তা খেয়াল করতে পারিনি। দীনেশের কাছেও একটা রিভলভার ছিল, তবে সেটা (তখন) তাঁর হাতে ছিল কিনা তা লক্ষ্য করে দেখিনি। সে গুলি ছুঁড়েছিল কিনা, তাও বলতে পারব না। বোমা ছোঁড়ার ফলে আমি কোনও আঘাত পাইনি। কিন্তু দীনেশ আঘাত পেয়েছিল কিনা, তা জানি না। আমরা কিছুক্ষণ একসঙ্গে ধর্মশালার দিকে ছুটে গিয়েছিলাম এবং তারপরেই আলাদা হয়ে যাই। আমি (রেল) লাইন ধরে এগোনোর পর সমস্তিপুরের রাস্তায় এসে উঠেছিলাম। (আর) ধর্মশালা থেকে আলাদা হয়ে পড়ার সময় দীনেশ সিধে পথে ছুট দেয়।
ধর্মশালার কাছে ছুটে আসার সময় একজন কনস্টেবল আমাদের ডেকেছিল, কিন্তু আমরা তা কানে না তুলে চুপিসারে ছুট মেরেছিলাম। ওইদিন রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ আমরা যখন জজ সাহেবের বাড়ির কাছে অপেক্ষা করছিলাম, তখন দুজন লোক আমরা কোথায় থাকি সে কথা জিজ্ঞাসা করছিল। কিন্তু আমাদের সঙ্গে তাঁর (কখনও) সাক্ষাৎ হয়নি। ওই লোকটি আমাদের ওখান থেকে চলে যেতে বলে, কেন না সে পথ দিয়ে নাকি সাহেবরা যাতায়াত করে। আমি বলেছিলাম যে, আমি একজন ছেলের জন্যে অপেক্ষা করছি। সে এলেই চলে যাব। তারপর আমরা পুবদিক ধরে চলে যাই। আমরা খানিকটা পথ গিয়ে আবার ফিরে আসি সেই জজ সাহেবের কোর্ট আর পুকুরের লাগোয়া গাছতলায় যেখানে আমরা (জজ সাহেবের ঘোড়ার) গাড়িটি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলাম। লোক দুটোর সঙ্গে আমার যখন কথা হচ্ছিল, তখন বোমাটা আমার বাঁহাতেই ধরা ছিল, হাতটা ঝুলছিল। বোমাটা একটা টিনের বাক্সে রাখা ছিল, গাছতলায় পৌঁছনোর আগেই আমরা এই টিনের বাক্সটা ছুঁড়ে ফেলেছিলাম। কেন না এই কাজে আমারই বেশি ইচ্ছে ছিল। ধর্মশালা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আমি সেখানে একটা ধুতি ফেলে এসেছিলাম। দীনেশ কিছু ফেলে গিয়েছিল কিনা, তা আমার জানা নেই। দীনেশের বয়েস প্রায় আমারই মতো, তাঁর গোলপানা মুখ আর শরীরের গঠন আমার থেকে কিছুটা ভাল। লম্বায় সে আমারই মতো, ভ্রু জোড়া আলাদা আর আমার মতোই তারও চুল কালো ও কোঁকড়া। সে বলেছিল, তাঁর একজন ভাই বাঁকিপুরে রেলে চাকরি করে।
খবরের কাগজ পড়া ছাড়াও আমি বিপিন পাল, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি এদের মতো লোকেদের বক্তৃতা শুনতাম এবং সেগুলো শুনে আমি এই কাজে অনুপ্রাণিত হয়েছি। বিডন স্কোয়্যারে একজন শক্তসমর্থ সন্ন্যাসীও একবার বক্তৃতা করেছিল। কলকাতায় আমি আমার মামা সতীশচন্দ্র দত্তের সঙ্গে থাকতাম। তিনি একজন স্কুলশিক্ষক আর কর্পোরেশন স্ট্রিটের ৪ নং কী ৫ নং বাড়িতে থাকতেন। তাঁর স্কুলটাও ছিল ওই কর্পোরেশন স্ট্রিটেই।
এই কার্তুজগুলো (২৩টা ছোট ও ১৪টা বড়) আমারই (প্রদর্শ নং ৫) এবং এগুলি কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটের একটা বাজার থেকে আমি কিনেছিলাম। আমার কোনও লাইসেন্স ছিল না। অমূল্যরতন দাস নামে একটা ছেলে দুটো রিভলভার এনে দিয়েছিল। আমি তাঁকে এর একটার জন্যে ২৫ টাকা আর অন্যটার জন্যে ১৫ টাকা দিয়েছিলাম। এটা প্রায় দুমাস আগেকার কথা। এই ঘড়িটা (প্রদর্শ নং ৬) আমার আর এই রেলওয়ে টাইমটেবল (প্রদর্শ নং ৭) ও এই মোমবাতি আর দেশলাইটাও (প্রদর্শ নং ৮) আমার। এই টাকা রাখার ব্যাগটাও (প্রদর্শ নং ৯) আমার, এটাতে তিনটে ১০ টাকার নোট, একটা (কাঁচা) টাকা, একটা দু আনি আর কিছু খুচরো পয়সা (মোট ৩১ টাকা ৭ আনা ৩ পাই) আছে।
এই টিনের কৌটোটাও (প্রদর্শ নং ১০) আমার। এর ভেতরেই বোমাটা একটা কাপড়ে মুড়ে রাখা ছিল। এই জুতো জোড়াটা (প্রদর্শ নং ১১) আমার আর ওই জোড়াটা (প্রদর্শ নং ১২) দীনেশের। ওই চাদরটা (প্রদর্শ নং ১৩) দীনেশের। সে ওটা মাথায় জড়িয়ে রাখত। চাদরের একটা টুকরো দিয়ে বোমাটা মুড়ে টিনের কৌটৌয় পুরে রাখা হয়েছিল। চাদরটা অন্তত দু–তিনবার ছেঁড়া হয়েছিল।
আমি প্রায় এক বছর আগে মেদিনীপুর কলেজ ছেড়েছি।
প্রশ্ন: এই বিবৃতির সবটুকুই কি তোমার?
উত্তর: আমি যা বলেছি, সব সত্যি আর আমি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছেয় এই বিবৃতি দিয়েছি।”
নিজের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে শ্রী ক্ষুদিরাম বসু অপর একজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছিলেন – ‘দীনেশচন্দ্র রায়’। নিজের বক্তব্যে ক্ষুদিরাম জানিয়েছিলেন যে উক্ত ব্যক্তিকে তিনি চিনতেন না, তাঁর সঙ্গে ক্ষুদিরাম আগে পরিচিত ছিলেন না। নামের থেকেও পরিষ্কার যে ক্ষুদিরাম সত্যিই অপর ব্যক্তির সাথে পরিচিত ছিলেন না। ক্ষুদিরাম উল্লেখিত এই ‘দীনেশচন্দ্র রায়’ ছিল একটি ছদ্মনাম, আসল নাম – শ্রী ‘প্রফুল্ল চাকী’, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আত্মহুতি বা আত্মবলিদান বা আত্মহত্যা করা প্রথম শহীদ। শ্রী ক্ষুদিরাম বসু তাঁর ফাঁসির পরে নাম ও খ্যাতি পেয়েছেন তার সিকিভাগও পান নি শ্রী প্রফুল্ল চাকী। অথচ তাঁর মৃত্যু আত্মহত্যা নাকি ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ কর্তৃক পরিকল্পিত ভাবে হত্যা, তা নিয়ে বিতর্ক আজও বর্তমান। আর প্রফুল্ল চাকীর বৈপ্লবিক জীবন কম রোমহর্ষক নয়। কেবলমাত্র কিংসফোর্ড হত্যা ষড়যন্ত্র ও প্রচেষ্টার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না, তাঁকে তার আগে আরও একাধিকবার বিভিন্ন অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং সেগুলো সম্পন্ন করার জন্য তিনি নির্ভীক চিত্তে অগ্রসর হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, কেউই বিশেষভাবে তাঁর বৈপ্লবিক জীবন ও কর্মকাণ্ড কে নিয়ে আগ্রহী হন নি ও আলোকপাত করেন নি।
প্রফুল্ল চাকী সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের হাঁটতে হবে অতীতের পথে।
সময়টা ১৯০৭ সালের শেষের দিক। ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে যে সময়টি চিহ্নিত হয়ে আছে অগ্নিযুগ হিসেবে। নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি অবিশ্বাস দেখা দেয় ততকালীন তরুণ সমাজের একটি অংশের মধ্যে। ক্রমশঃ তাদের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা গড়ে ওঠে যে ক্ষাত্রশক্তি ব্যতীত রাজনৈতিক মুক্তি সম্ভব নয়। অর্থাৎ মাতৃভূমির শৃঙ্খল মোচনের একমাত্র পথ হলো সশস্ত্র সংগ্রাম।কিন্তু সুপ্রশিক্ষিত ইংরেজ সেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেওয়ার মতো শক্তি ছিল না তাঁদের। তাই তাঁরা বেছে নেন রাজনৈতিক গুপ্তহত্যার পথ। সিক্সবোর রিভলবার আর দেশীয় হাতবোমা দিয়ে, রাইফেল আর মেশিনগান সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীর মোকাবেলা করা অসম্ভব হওয়ায় তাঁরা বেছে নেন গুপ্তহত্যার মাধ্যমে ব্রিটিশদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার পদ্ধতি যাতে তাঁরা দ্রুত পালায় ভারত ছেড়ে। আন্দোলন পরিচালনার জন্য গড়ে ওঠে যুগান্তর আর অনুশীলন নামের দুটি গুপ্ত সমিতি। সুবোধ মল্লিক, হেমচন্দ্র, চারুদত্ত, বারীন ঘোষ , ঋষি অরবিন্দ এরাই ছিলেন নেতৃত্বে। এদের নির্দেশেই কাজ করতেন অন্যরা।
সে এক উত্তাল সময়। সারা ভারতে শুরু হয় ব্রিটিশ শাসক আর সশস্ত্র বিপ্লববাদীদের সংঘর্ষ, ধরপাকড় আর নির্যাতন। বিপ্লবীরা সুযোগ বুঝে গুম করে দেয় ব্রিটিশ শকুনদের। স্বাধীনতাকামী বিপ্লববাদী দলগুলোকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী মরিয়া হয়ে উঠে। একের পর এক বিপ্লবীকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা রুজু করে তাঁদের উপর চালানো হত শারীরিক নির্যাতন। আর তাঁদেরকে আন্দামান জেলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে পাঠানো হতো দীপান্তরে।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলনের সময়ে অরবিন্দ ঘোষের নেতৃত্বে একদল কিশোর-তরুণ বিপ্লববাদের মন্ত্র গ্রহণ করেন৷ মজফ্ফরপুরের জেলা ও সেশন জজ ডি. এইচ. কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য বাংলার বিপ্লবী সংস্থা ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্লকে নিয়োজিত করে৷ কিংসফোর্ডের কলকাতায় অবস্থান কালে (আগস্ট ১৯০৪ থেকে মার্চ ১৯০৮) তাঁর হাতে অনেক বিপ্লবীর বিচার ও শাস্তি হয়৷ ‘যুগান্তর’, ‘সন্ধ্যা’, ‘বন্দেমাতরম’ প্রভৃতি পত্রিকাগুলির বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগের বিচারক তিনিই ছিলেন এবং শাস্তি প্রদানও করেছিলেন৷ প্রতিবাদী কিশোর সুশীল সেনকে প্রকাশ্যে বেত মারার হুকুমও এই বিচারকই দেন৷ হেমচন্দ্র দাস কানুনগোকে দিয়ে বোমা তৈরি করানো হল৷ জানুয়ারি ১৯০৮ নাগাদ একটি বারোশো পৃষ্ঠার পুস্তক বোমা (যা খোলামাত্রই বিস্ফোরণ ঘটাবে) কিংসফোর্ডের গার্ডেনরিচের ঠিকানায় পার্সেল করে পাঠানো কিন্তু কিংসফোর্ড বইটি না খুলে আলমারিতে রেখে দেন৷ ফলে সে যাত্রায় তিনি বেঁচে গেলেন৷
বিপ্লবীদের গোপন মিটিংয়ে প্রশ্ন উঠল এ কাজের দায়িত্ব কাকে দেয়া হবে? বারীন ঘোষ ও উপেন বন্দ্যোপাধ্যায় এবার স্থির করলেন কিংসফোর্ড-নিধনের ভার দেওয়া হবে প্রফুল্ল চাকীকে৷ আড়াল থেকে মিটিংয়ের কথা শুনে প্রফুল্ল চাকী বললেন,
“আমি প্রস্তুত। বলুন কি করতে হবে আমাকে।”
কিন্তু সবাই ভাবলেন এ কাজের জন্য আরো একজন দরকার। ভেবেচিন্তে ক্ষুদিরাম বসুর নাম ঠিক হলো। ক্ষুদিরামের অভিভাবক সত্যেন বসুর কাছে চিঠি লিখে পাঠানো হলো। চিঠি অনুযায়ী ১৯০৮ সালের ২৫শে এপ্রিল ক্ষুদিরাম কলকাতায় এসে পৌঁছলেন। কলকাতায় গোপীমোহন দত্তের ১৫ নম্বর বাড়িটি ছিলো বিপ্লবীদের তীর্থক্ষেত্র। এখানে বসেই হেমচন্দ্র ও উল্লাসকর শক্তিশালী ‘book bomb’ তৈরী করেছিলেন।
শুরু হলো আবার নতুন প্রস্তুতি।
প্রফুল্ল চাকী জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর। বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে (বর্তমানে যা বাংলাদেশের অন্তর্গত)। তাঁর বাবার নাম রাজ নারায়ণ চাকী। তিনি বগুড়ার নবাব এস্টেটে কর্মরত ছিলেন। মাতা স্বর্ণময়ী চাকী। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে প্রফুল্ল চাকী ছিলেন কনিষ্ঠ সন্তান। মাত্র ২ বছর বয়সে প্রফুল্ল চাকীর বাবা মারা যান।
প্রফুল্ল চাকীর পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে, মায়ের কাছে। প্রাথমিক পড়াশুনা শেষে বগুড়ার নামুজা জ্ঞানদা প্রসাদ ইংরেজী বিদ্যালয়ে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। এই স্কুল থেকে তিনি মাইনর পাশ করেন। তারপর ১৯০২ সাল থেকে প্রায় ১৯০৫ সাল পর্যন্ত রংপুর জেলা স্কুলে পড়াশুনা করেন। এরপর ভর্তি হন রংপুর জাতীয় স্কুলে। রংপুর জাতীয় স্কুলে পড়ার সময় তিনি গুপ্ত সমিতির সভ্য হন।
১৯০৫ সালের ‘বঙ্গভঙ্গবিরোধী’ আন্দোলনের মাধ্যমে জন্ম নেয় স্বদেশী আন্দোলন। যে আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেন ছাত্ররা। বিশেষ করে স্কুলের কিশোররা। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ও স্বদেশি আন্দোলনের সমর্থনে সক্রিয় অহিংস সংগ্রাম যেমন পরিচালিত হয়, তেমনি সহিংস কর্মকাণ্ডভিত্তিক গোপন বিপ্লবী সংগঠনেরও জন্ম হতে থাকে।
১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন প্রফুল্ল চাকী। এ সময় প্রফুল্ল চাকী জিতেন্দ্রনারায়ণ রায়ের নেতৃত্বে গুপ্ত সংগঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন। এখানে তাঁর শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা এবং পিস্তল চালনার শিক্ষাও হয়। ওই সময় ব্রিটিশ সরকারের সাম্রাজ্যবাদী শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে সশস্ত্র বিপ্লবী সংগ্রাম শুরু হয়। বাংলার অসংখ্য তরুণ, যুবক এই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে ব্রিটিশ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে বৈপ্লবিক জীবন বেছে নেন।
নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় পূর্ববঙ্গ সরকারের কারলিসল সার্কুলারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের দায়ে প্রফুল্ল চাকীকে রংপুর জাতীয় স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি পুনরায় নবম শ্রেণীতে রংপুর ন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে পড়ার সময় জিতেন্দ্রনারায়ণ রায়, অবিনাশ চক্রবর্তী, ঈশানচন্দ্র চক্রবর্তীসহ অন্যান্য বিপ্লবীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। আর এসময় থেকে তিনি বিপ্লবী ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হতে থাকেন।
১৯০৭ সালে স্বদেশী আন্দোলনের সময় প্রফুল্ল চাকী নবম শ্রেণীতে পড়তেন। ওই বছর বিপ্লবী বারীন্দ্র কুমার ঘোষ রংপুরে আসেন। রংপুরে পূর্বে যেসকল গুপ্ত সমিতি গঠিত হয়েছিল সেগুলোকে নিয়ে বারীন্দ্র কুমার ঘোষ নতুন আঙ্গিকে একটি বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি গঠন করেন। এর পূর্বে রংপুরে ঈশানচন্দ্র চক্রবর্তী ও তাঁর ছেলে প্রফুল্ল চক্রবর্তী, সুরেশ চক্রবর্তী এবং প্রফুল্ল চাকীর চেষ্টায় একটি কুস্তির আখড়া গড়ে উঠে। এই আখড়ায় স্থানীয় ছাত্র- যুবকরা বিপ্লবাত্মক কাজে দীক্ষা নেন। তৎকালীন সময়ে বিপ্লবীদের মানসিক শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের জন্য বঙ্কিমচন্দ্র্রের আনন্দমঠ, দেবীচৌধুরাণী উপন্যাস, স্বামী বিবেকানন্দের বাণী এবং সখারাম গনেশ দেউস্করের লিখিত গ্রন্থ ‘দেশের কথা’ বিপ্লবীদেরকে পড়ানো হত।
প্রফুল্ল চাকী রংপুরের কুস্তির আখড়ার পরিচালক ছিলেন। এ সম্পর্কে প্রফুল্ল চাকীর বৈপ্লবিক সাধনার সহযোদ্ধা শ্রীযুক্ত সুরেশ চক্রবর্তী লিখেছিলেন,
“রংপুরে আমাদের একটি বৈপ্লবিক দল ছিল। আমরা তিনজনেই (প্রফুল্ল চক্রবর্তী, সুরেশ চক্রবর্তী ও প্রফুল্ল চাকী) অন্তর্ভূক্ত ছিলাম। এই দলে প্রবেশের অনুষ্ঠান ছিল-বুক কেটে সেই রক্ত দিয়ে কয়েকটি প্রতিজ্ঞা সম্বলিত একখানি কাগজে স্বাক্ষর করা। এই প্রতিজ্ঞাগুলোর একটি ছিল- প্রয়োজন হলে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করবো।”
ওই বছর শেষের দিকে প্রতিষ্ঠানিক পড়াশুনার ইতি ঘটিয়ে বৈপ্লবিক কর্মকান্ডে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য কলকাতায় চলে যান প্রফুল্ল চাকী। শ্রী অরবিন্দর ভাই বারীন্দ্রকুমার ঘোষের নেতৃত্বে ও শ্রী অরবিন্দর অনুপ্রেরণায় তৈরি হয়েছিল সশস্ত্র বিপ্লবী দল। কলকাতার ৩২নং মুরারিপুকুরের বাগানবাড়িটি ছিল সশস্ত্র বিপ্লবীদের মূল কেন্দ্র। ৩২নং মুরারিপুকুরের বাগানবাড়িটি ছিল অরবিন্দ, বারীন্দ্র, মনোমোহন ও বিনয় ঘোষের যৌথ সম্পত্তি। মুরারিপুকুরের বাগানের কেন্দ্রস্থলে ছিল ছোটো আকারের একটি বাড়ি। মুরারিপুকুরের বাগানবাড়িটিতে সাধারণতঃ থাকতেন সশস্ত্র বিপ্লবী নেতা বারীন্দ্রকুমার ঘোষ।
কলকাতায় এসে প্রফুল্ল চাকী ৩২নং মুরারিপুকুরের বাগানবাড়িতে ওঠেন। বারীন্দ্রকুমার ঘোষের নির্দেশে প্রফুল্ল চাকী ‘যুগান্তর’ দলে যোগ দেন। রংপুর থেকে আরো কয়েক জন কর্মী কৃষ্ণজীবন, নরেন বক্সী ও পরেশ মৌলিক কলকাতায় যান। তাঁরাও ৩২নং মুরারিপুকুরের বাগানবাড়িতে ওঠেন এবং বিপ্লবী কর্মকান্ডে যুক্ত হন। বারীন্দ্র ঘোষ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ শোষকদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য মুরারীপুকুরের বাগানবাড়ীতে বোমা, পিস্তল প্রস্তুত ও সংগ্রহ, অস্ত্র ব্যবহারে তরুণ ও যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং বিপ্লবের জন্য অর্থ সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে থাকেন।
১৯০৬ সালে গুপ্ত সমিতির বিপ্লবীরা পূর্ব বঙ্গের ছোট লাট স্যার রামফিল্ড ফুলারকে দুইবার হত্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হননি। ১৯০৭ সালে বারীন্দ্র কুমার ঘোষ পুনরায় ছোট লাট স্যার রামফিল্ড ফুলারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। এজন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই বারীন্দ্র কুমার ঘোষ ও অরবিন্দ ঘোষ রংপুরের বিপ্লবী দলকে রংপুরে গিয়ে এক জমিদার বাড়ীতে ডাকাতি করে টাকা সংগ্রহ করতে পাঠান। এই দলে ছিলেন নরেন বক্সী, হেমচন্দ্র দাস, মহেন্দ্র লাহিড়ী, পরেশ মৌলিক ও প্রফুল্ল চাকী। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রফুল্ল চাকী ও পরেশ মৌলিক। আর রংপুর থেকে যুক্ত হয়েছিলেন ঈশান চক্রবর্তী ও তাঁর ছেলে মনোরথ চক্রবর্তী। সন্ধ্যার আগে মনোরথকে পাঠানো হয়েছিল জমিদার বাড়িতে। বিপ্লবী দল ডাকাতি করার জন্য প্রস্তুত ছিল।
রাতে মনোরথ এসে খবর দেন যে, পূর্বেই ডাকাতির সংবাদ পেয়ে জমিদার বাড়ীতে পুলিশ এসেছে। এই খবর শুনে ডাকাতির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। যে কারণে সেবারও ছোট লাট স্যার রামফিল্ড ফুলারকে হত্যা করার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এরপর আবার ফুলারকে হত্যার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ঠিক হয়, ফুলার সাহেব ধুবড়ী হতে যখন স্পেশাল ট্রেনে রংপুর আসবেন, তখন ধুবড়ী হতে একজন বিপ্লবী ফুলার সাহেবের আসার কথা টেলিগ্রাম করে জানাবেন। আর তখন রংপুর স্টেশনের একমাইল দূরে রেললাইনের নিচে ব্যাটারী সংযোগে একটি বোমা রাখা হবে। আর যদি বোমা না ফাটে তাহলে পরেশ মৌলিক ও প্রফুল্ল চাকী লাল লন্ঠন দেখিয়ে বিপদ সঙ্কেত বুঝিয়ে গাড়ি থামাবেন। তারপর প্রফুল্ল চাকী রিভলবার দিয়ে ফুলারকে হত্যা করবেন। কিন্তু এ যাত্রায়ও ফুলার হত্যা পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। কারণ ওই দিন ফুলার ষ্টীমার দিয়ে চলে যান।
১৯০৭ সালের জুলাই মাসে ‘যুগান্তর’ পত্রিকার সম্পাদক স্বামী বিবেকানন্দের ভাই ভূপেন্দ্র নাথ দত্তকে রাজদ্রোহমূলক প্রবন্ধ লেখার জন্য কারদন্ড দেওয়া হয়। কয়েক সপ্তাহ পর ‘বন্দেমাতরম’ সম্পাদক অরবিন্দ ঘোষকে একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া বৃটিশ সরকার সমগ্র দেশবাসীর উপর বিশেষ করে বাঙালী যুবকদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। একই সময়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়কে কারাদন্ড দেওয়া হয়। সেসময় এর প্রতিবাদ প্রচন্ড রূপ নেয়। সমগ্র বাংলার শহর ও গ্রামাঞ্চলে ছাত্র-যুবকদের মিছিল ও ধর্মঘট শুরু হয়, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের রূপ নেয়।
এই সময়ে আবার ফুলার সাহেবকে হত্যা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় এবং এবারও এর দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রফুল্ল চাকীকে । পরিকল্পনা অনুযায়ী নৈহাটি স্টেশনে ফুলার সাহেব স্পেশাল ট্রেনে ওঠার আগে প্রফুল্ল চাকী সেখানে হাজির হন। স্টেশনে তখন প্রচুর পুলিশ উপস্থিত। ফুলার সাহেব আসছেন ট্রেনে ওঠার জন্য। ওদিকে প্রফুল্ল চাকীর ব্যাগে বোমা। সতর্কতার সাথে প্রফুল্ল চাকী ওঁত পেতে ছিলেন বোমা নিক্ষেপ করার জন্য। এমন সময় একজন পুলিশ প্রফুল্ল চাকীকে ধাক্কা মেরে স্টেশন থেকে বের করে দেন। আর অন্যদিক থেকে ফুলার সাহেব ট্রেনে উঠে চলে যান।
১৯০৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রথমবার স্যার এন্ড্রু ফ্রেজারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। এই হত্যাকান্ড পরিচালনার জন্য দায়িত্ব নেন – বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী, শান্তি ঘোষ ও প্রফুল্ল চাকী। তাঁকে মারার জন্য চন্দননগরে রেললাইনের নিচে একটি বোমা রাখা হয়। কিন্তু ট্রেন চলে যাওয়ার সময় বোমাটি না ফাটায় এন্ড্রু ফ্রেজার বেঁচে যান। তিন/চার দিন পর আবার ফ্রেজার কলকাতা থেকে যাওয়ার সময় বিপ্লবীরা একই পদ্ধতি অবলম্বন করেন। কিন্তু এন্ড্রু ফ্রেজারের স্পেশাল ট্রেন ওই পথ দিয়ে না আসায় দ্বিতীয় চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
এরপর প্রফুল্ল চাকী বড় লাট কিংসফোর্ডকে হত্যা করার দায়িত্ব নেন।
প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম কলকাতা রেলস্টেশনে পৌঁছানোর পর বারীণ ঘোষ তাঁদের কাছে কিংসফোর্ডকে মারার জন্য বোমা পৌঁছে দিলেন। বোমার সঙ্গে রিভলবার কেনার জন্য কিছু টাকা ও মজঃফরপুরে যাওয়ার মানচিত্র দেয়া হলো তাঁদেরকে। প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম প্রথমবারের মতো একত্রিত হলেন রেলস্টেশনে। এর আগে কেউ কাউকে চিনতেন না। দুজনের মধ্যে কথা হলো। কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য ইস্পাত দৃঢ় সংকল্প করলেন তাঁরা। এরপর সতর্কতার সাথে চলে যান মজঃফরপুরে। কারণ এখানেই বাস করতেন কিংসফোর্ড। প্রতিদিন ক্লাব হাউজ থেকে সন্ধ্যার পর সাদা ফিটন গাড়িতে করে নিয়মিত বাড়ি ফিরে আসতেন কিংসফোর্ট। পাঁচ দিন অতিবাহিত হলো, কিন্তু তাঁকে হত্যা করার উপযুক্ত সুযোগ পেলেন না তাঁরা। ১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল, ষষ্ঠ দিন এলো সেই সুযোগ।
সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার৷ অমাবস্যা৷ বিপ্লবীদের কাছে খবর ছিল, ইউরোপিয়ান ক্লাবে রোজই সন্ধ্যের পর ফিটন গাড়িতে চেপে তাস খেলতে যেতেন কিংসফোর্ড, ফিরতেন সন্ধে সাড়ে আটটা নাগাদ৷ জজ সাহেবের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন ক্ষুদিরাম-প্রফুল্ল বোমা-পিস্তল নিয়ে৷ ফিটন গাড়িটিকে ক্লাবের দিক থেকে আসতে দেখে তাঁরা বোমা ছোড়ার জন্য প্রস্তুত হলেন, কেননা তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন এই গাড়িটিই কিংসফোর্ডের এবং সেখানে তিনিই রয়েছেন৷ গাড়িটি কাছাকাছি আসতেই বোমা ছোড়া হল, প্রচণ্ড বিস্ফোরণে তা গাড়িটিকে চুরমার করে দেয়৷ কোচম্যান ও ফুটবোর্ডে দাঁড়িয়ে থাকা সহিস আহত হল এবং ভিতরে বসে থাকা দুই মহিলা মারাত্মকভাবে জখম হলেন৷ এই মহিলা দু’জন ছিলেন স্থানীয় উকিল প্রিঙ্গল কেনেডি সাহেবের স্ত্রী ও কন্যা৷ তাঁরা ক্লাব থেকে ফিরছিলেন, তাঁদের গাড়িটি ছিল কিংসফোর্ডের গাড়িটির মতোই দেখতে৷ মিস কেনেডি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মারা যান এবং মিসেস কেনেডির মৃত্যু হয় ২রা মে সকালে৷ কিংসফোর্ড সেদিন একটু পরে ক্লাব থেকে বেরিয়েছিলেন৷
এই ঘটনার ১ ঘন্টা পর পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সকল রেল ষ্টেশনে খবর পৌঁছে দেওয়া হয়। আততায়ীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
ক্ষুদিরাম অনেক সতর্কতার সাথে মজঃফরপুর থেকে ২৪ মাইল পথ পায়ে হেঁটে ওয়ালি ষ্টেশনে পৌঁছান। প্রচন্ড জলের তৃষ্ণা মিটাতে একটি দোকানে যান তিনি। আততায়ীকে ধরার জন্য পুলিশ সমস্ত শহরে ওঁত পেতে ছিল। সাদা পোশাকের পুলিশ ওই ওয়ালি ষ্টেশনেও ছিল। তাঁরা ক্ষুদিরামকে সন্দেহ করে এবং ঠিক জল খাওয়ার সময়ই ২ জন পুলিশ ক্ষুদিরামের দুই হাত শক্ত করে ধরে ফেলে। সাথে সাথে আরো ৫/৬ জন পুলিশ ক্ষুদিরামকে ঘিরে ফেলে। ক্ষুদিরামও দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আত্মাহুতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে ধরার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্র মুক্ত করে নেওয়ায় তিনি আত্মাহুতি দিতে পারেননি। পরে নিজের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে ক্ষুদিরাম বোমা হামলার সব দায় নিজের কাঁধে নেন। সহযোগীদের কথা বলেন না। ফলে বোমা হামলা ও দু’জনকে হত্যার অপরাধে ক্ষুদিরামের ফাঁসির আদেশ হয়।
অন্যদিকে প্রফুল্ল চাকী অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য ছদ্মবেশে ট্রেনে করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ট্রেনে নন্দলাল ব্যানার্জী নামে পুলিশের এক দারোগা সমস্তিপুর (মোকামঘাট রেলস্টেশন) রেল স্টেশনের কাছে প্রফুল্ল চাকীকে দেখে সন্দেহ করেন। প্রফুল্ল আগেই বুঝে গিয়েছিলেন নন্দলাল তাঁকে অনুসরণ করছেন তাই তিনিও চেষ্টা করতে থাকেন নিজেকে আড়ালে রাখার৷ মোকামাঘাট স্টেশনে এসে প্রফুল্ল কলকাতায় আসার টিকিট কিনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন৷ সেই সময়ে নন্দলাল, রামাধার শর্মা, শিবশঙ্কর, জামির আমেদ ও আরও কয়েকজন কনস্টেবল মিলে প্রফুল্লকে ধরার চেষ্টা করেন৷ ধরা পড়ে গিয়েছেন বুঝতে পেরে প্রফুল্ল দৌঁড়াতে শুরু করেন৷ কিন্তু সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে এঁটে ওঠা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি৷ প্রফুল্ল স্টেশন থেকে নেমে দৌঁড়ে অনেক দূরে চলে যান। কিন্তু নন্দলাল দারোগা তাঁর পিছু ছাড়েননি, বরং ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার শুরু করেন। তখন স্টেশনে পাহারারত পুলিশ ও জনতা প্রফুল্ল চাকীকে ধরার জন্য তাঁর পিছু ছুটতে শুরু করে।
দৌঁড়াতে দৌঁড়াতেই প্রফুল্ল চাকী দারোগাকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়েন। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর তিনি আর গুলি চালান নি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, যদি পুলিশের হাতে তিনি ধরা পড়েন তাহলে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাকী গুলি দিয়ে নিজেকে হত্যা করবেন। যার নাম আত্মহত্যা। কারণ ধরা পড়ার পর পুলিশের মারের মুখে বিপ্লবীদের অনেক গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে। দৌড়ানোর এক পর্যায়ে প্রফুল্ল চাকী কোণঠাসা হয়ে পড়েন। দারোগা দৌঁড়ে প্রায় তাঁর কাছাকাছি চলে আসেন, তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই ধরে ফেলতেন তাঁকে। এরপরে পুলিশের রিপোর্ট ও বয়ান অনুসারে, এমন সময় পকেটে রাখা রিভলবার বের করে চিবুকের নীচে ধরে পর পর ২টি গুলি নিজ দেহে বর্ষণ করে আত্মাহুতি দেন প্রফুল্ল চাকী। এই ঘটনার পর থেকে মূলত ভারতবাসী জাগতে শুরু করে। আর তখন থেকেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম আরো জঙ্গি রূপ ধারণ করে।
একেবারে শেষ পর্বে গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়৷ এখন প্রশ্ন হল, গুলি কে করেছিল? ব্রিটিশ পুলিশের বয়ানে লেখা হয়েছে, প্রফুল্ল নিজের দিকে বন্দুক তাক করে আত্মহত্যা করেছিলেন৷ কিন্তু পুলিশ রেকর্ডে রাখা তাঁর মৃতদেহের ছবি অন্য কথা বলে৷
প্রফুল্ল চাকীর মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা, অতীতে ও সাম্প্রতিক অতীতে এই প্রশ্ন অনেকেই তুলেছেন।পশ্চিমবঙ্গের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ শ্রী নির্মল নাগ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সাম্প্রতিক অতীতে ‘এই সময়’ পত্রিকায় তিনি লিখেছিলেন-
“প্রফুল্লর শরীরে যে-দু’টি গুলির ক্ষতস্থান দেখা যাচ্ছে, ফরেনসিক ও বিভিন্ন সমীক্ষার প্রেক্ষিতে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে খুবই বিরল ঘটনা বলে মনে করা যেতে পারে৷ কেননা, তিনি ডান-হাতি ছিলেন এবং ওই দু’টি স্থানে অর্থাৎ শরীরের বাঁ দিকে পিস্তলে নল ঘুরিয়ে নিজে-নিজে একটি নয় দু’টি গুলি করা রীতিমতো অসুবিধাজনক শুধু নয়, তা প্রায় অসম্ভবই (not within easy access)৷ এ ছাড়া গুলির ক্ষতের আকৃতি এবং ব্যাস দেখে মনে হয় না এগুলি near contact অথবা contact shot-এর কারণে ঘটেছে, যা আত্মহত্যার ক্ষেত্রে সব সময় হয়ে থাকে৷ কালো রঙের ছাপও সেখানে অনুপস্থিত৷
ব্রিটিশ পুলিশের রেকর্ডের বয়ান অনুযায়ী, প্রফুল্ল আত্মহত্যা করেছিলেন এই নিশ্চিত-মত এ যাবত্ সকলেই পোষণ করেছেন৷ অথচ, যে-যে যুক্তিগুলি তাঁর আত্মহত্যার তত্ত্বকে সমর্থন করছে না সেগুলি সংক্ষেপে এইরকম–
১) সুদেহী প্রফুল্লর সঙ্গে গুলিভরা পিস্তল থাকতে বিনা বাধায় তিনি আত্মসমর্পণ করে স্বহননে প্রবৃত্ত হবেন এমন দুর্বল চিত্তের মানুষ তিনি ছিলেন না৷ কেউ কেউ বলেছেন, তিনি পুলিশের উদ্দেশে গুলি ছুড়েছিলেন, তবে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়৷ অথচ, অন্য তথ্য থেকে জানা যায়, তিনি পিস্তল ছোড়ায় দক্ষ ছিলেন, গুলি ছোড়ার রীতিমতো অভ্যাস করতেন মুরারিপুকুর-বাগানবাড়িতে৷ তবে বিপদকালে উত্তেজনাবশে তিনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিলেন, সেটাও হতে পারে!
২) তাঁর কাঁধে এক কনস্টেবল সজোরে লাঠির আঘাত করেছিল৷ শুধু একটিই? তা হলে নীচের ঠোঁটের গভীর ক্ষতের কারণ কী? কান-মুখ দিয়ে রক্ত বেরুনোর অস্পষ্ট দাগ? এসব অত্যাধিক দৈহিক পীড়নের ফল নয় কী?
৩) দু’টি গুলির ক্ষতের স্থান নির্দেশ করে একজন বাঁ-হাতির পক্ষেই এই স্থানে দুইবার গুলি করে আত্মহত্যা করা সম্ভব? প্রফুল্ল স্বাভাবিক ডান-হাতি ছিলেন৷
৪) vital organ-এ একাধিক গুলিতে আত্মহত্যার ঘটনা বিরল, কেননা প্রথমটির পরে শারীরিক ক্ষমতা তেমন আর থাকে না৷
৫) কোনও competent authority কেন, কোনও ডাক্তারের দেওয়া মৃত্যুর সার্টিফিকেটও নেই৷
অতএব, প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করেছিলেন প্রচলিত এই ‘অতিসরল’ কথাটি মেনে নিতে প্রবল আপত্তি রয়েছে৷ বরং হত্যার লক্ষণগুলিই এখানে প্রকট৷ প্রফুল্ল মৃত্যুর ঘটনাটি সম্ভবত এই রকমভাবে ঘটেছিল বলে আমার অনুমান৷
মোকামা স্টেশনে প্রফুল্লকে বাগে পেয়ে কর্তব্যপালনে অবিচল পুলিশেরা সকলে মিলে লাঠি দিয়ে ও যথেচ্ছ দৈহিক পীড়নে তাঁকে কাবু করে এবং অর্ধচৈতন্য বা অচৈতন্য করে ফেলে৷ এর পর তাঁরই পিস্তল দিয়ে একটি ফাঁকা আওয়াজ এবং অবশেষে তাঁর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দু-দু’টি গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে৷ যদিও অনেকেই বলেছেন, পুলিশের উদ্দেশে প্রফুল্ল একটি গুলি করেছিলেন এবং তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়৷ এটা হয়ে থাকলে পুলিশ কোনওভাবে তাঁর হাত থেকে পিস্তলটি ছিনিয়ে নিয়ে সেটি দিয়েই তাঁকে হত্যা করে৷
প্রফুল্লর পিস্তলের ম্যাগাজিনে ৭টি কার্তুজ ভরার ব্যবস্থা ছিল এবং সম্ভবত প্রফুল্ল ৭টি কার্তুজই ভরেছিলেন৷ পিস্তলটি বাজেয়ান্ত করে দেখা যায়, সেখানে ৪টি কার্তুজ রয়েছে, অর্থাত্ ৩টি খরচ হয়েছিল৷ ছবিতে দু’টি গুলির ক্ষত শরীরে দেখা গেছে৷ তা হলে আর একটি গুলির লক্ষ্য জানা যাচ্ছে না, হতে পারে তা পুলিশের উদ্দেশেই, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল, অথবা প্রফুল্লর শরীরের অন্য কোনও অংশে তা আছে, যা ছবিতে দেখা যাচ্ছে না৷ শুধু ফোটো নেওয়া ছাড়া (দু’টি ছবিরই শুধু সন্ধান মেলে) পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য-কর্তব্যের কোনওটিই পালিত হয়নি৷ এবং তাই আসল সত্য নিয়ে এই এত দিন পরেও ধোঁয়াশা রয়ে যায়৷”
ঘটনার নৃশংসতা কিন্তু প্রফুল্ল চাকীর মৃত্যুর পরেও শেষ হয়নি। প্রফুল্ল চাকীর মৃত্যুর পরে, তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হবার জন্য তাঁর ছিন্ন মস্তক এক আধার স্পিরিটে ডুবিয়ে পাঠানো হয়েছিল কলকাতায়। দারোগা নন্দলাল ব্যানার্জি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিল এক হাজার টাকা পুরষ্কার এবং এর ঠিক আট মাস আট দিন পর বিপ্লবীরা নন্দলালকে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে হত্যা করেছিলো। কথিত আছে যে, কলকাতার গড়ের মাঠেরই কোন এক স্থানে প্রফুল্ল চাকীর ছিন্ন মস্তক মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ।
(তথ্যসূত্র:
১- First spark of revolution: the early phase of India’s struggle for independence, 1900-1920. By Arun Chandra Guha. Orient Longman.
২- অগ্নিযুগের প্রথম শহীদ প্রফুল্ল চাকী, হেমন্ত চাকী (১৯৫২)।
৩- মূল নথি থেকে ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী, চিন্ময় চৌধুরী (১৯৫৯)।
৪- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও অনুশীলন সমিতি, ক্ষীরোদ কুমার দত্ত (১৯৭৭)।
৫- এই সময়, ১০ই ডিসেম্বর ২০১৪ সাল।
৬- স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পত্রাবলী, তরুণ মুখার্জি সম্পাদিত, ইচ্ছে ফড়িং (২০১৭)।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত