দিশানু-অভিনন্দার মা ‘বিদেশি’! নাহ, তাঁদের বাবা, ছয় মামা-মাসি, বাকি সকল আত্মীয় ভারতীয় শুধু তাঁদের মা বিদেশি। নাম নেই এনআরসি তালিকায়। বছর ৩৭-এর ছন্দা পাল প্রায় আড়াই বছর বন্দী রয়েছেন তেজপুর জেলের ভিতর বন্দিশালায়। মায়ের আদর ছাড়াই বড় হচ্ছে দিশানুরা৷ ৮ বছরের দিশানু স্কুল যায় কিন্তু অভিনন্দা ভর্তিই হতে পারছে না। বাচ্চা দুটো এ–বয়সেই বুঝে গেছে ‘বিদেশি’ শব্দের মধ্যে রয়েছে কতটা বিদ্বেষ, কতটা অসহায়তা।
ছন্দার জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮২। লামডিং নেতাজি রোডে। তাঁরা ৭ ভাই–বোন। বাবা সুকুমার পাল মারা গেছেন। লামডিঙেই স্বর্ণালঙ্কারের দোকান রয়েছে তাদের। সরকারি রেকর্ড বলছে, সুকুমারবাবুর দোকানের লাইসেন্স ১৯৬৬ ও ১৯৬৭ সালে আসাম সরকার রিনিউ করেছে। এই রেকর্ড দেখিয়েই ছন্দার মা ও বাকি ভাইবোনেদের এনআরসি তালিকায় নাম ওঠে। ছন্দারও নাম ছিল চূড়ান্ত খসড়া তালিকায়। তবে ২৬ জুন প্রকাশিত অতিরিক্ত তালিকাতেই বাদ যায় ছন্দার নাম।
২০১৫ সালে ছন্দার নামে ডি–ভোটারের নোটিস জারি হয়। হোজাইয়ের শঙ্করদেবনগর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে শুরু হয় মামলা। সমস্ত কাগজপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু ২৬ জুলাই ২০১৭ তারিখে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করে জেলে ভরার নির্দেশ দেয়। সেই থেকে জেলবন্দি ছন্দা। ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, নথি থাকলেও সেগুলি ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। তাই এই সাজা।
২০১৪–র ভোটের আগে কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেছিলেন, ভোটার–তালিকায় নাম থাকলেই হবে। সব্বাইকে দেওয়া হবে নাগরিকত্ব। আর ২০১৪–য় বিজেপি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, হিন্দু বাঙালিদের ভয়ের কিছু নেই। সবাই ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। সব কাগজপত্র থাকলেও শুধুমাত্র নেতাদের কথা বিশ্বাস করে দেড় বছর জেল খাটলেন রংমিস্ত্রি শিবু শীল। ভোটার কার্ড থাকায় গুরুত্ব দেননি ডি–ভোটারের নোটিসকে। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ডেকে পাঠায় তাকে। সব প্রমাণও দেন। পয়সা খরচ করার ক্ষমতা ছিল না। ফলে ডিটেনশন ক্যাম্প। জামিন মিললেও মামলা এখনও চলছে। কিন্তু আইনি লড়াইয়ে সর্বস্বান্ত শিবু।