গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে সেই সময় প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়ে দক্ষিণবঙ্গে। তাই বাধ্য হয়ে উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করেছিলেন তিনি। তবে বুলবুলের প্রকোপ কাটতেই সোমবার কোচবিহার দিয়ে তাঁর সফর শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর মঙ্গলবার গঙ্গারামপুর ও মালদায় দুটি প্রশাসনিক বৈঠক সেরে গতকাল, বুধবার মুর্শিদাবাদ আসেন তিনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা ও বৈঠককে ঘিরে আশায় ছিলেন জেলার মানুষ। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে তিনি কোনও পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন কিনা এবং মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কী, সে দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাঁরা। সব প্রত্যাশাই পূরণ হয়েছে তাঁদের।
গতকাল বিকেলে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে প্রশাসনিক বৈঠকে ডিজিটাল রেশন কার্ডের প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য রাজ্যে সব থেকে বেশি ১৩ লক্ষ আবেদন পেয়েছি।’ সেই সময়ে জেলাশাসকের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের জেলা তো বড়। তিনটি এমপির জেলা। উত্তর ২৪ পরগনায় অবশ্য স্বাস্থ্য ও পুলিশ জেলা আলাদা হয়েছে। প্রশাসনিক দিকে থেকে উত্তর ২৪ পরগনা প্রথম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা দ্বিতীয় এবং তার পরে মুর্শিদাবাদ।’ সেই সময়ে বৈঠকে হাজির জেলার জনপ্রতিনিধিরা একটু নড়েচড়ে বসেন। ভেবেছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা ভাগ নিয়ে বুঝি মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলবেন। কিন্তু জেলা ভাগ নিয়ে কোনও কথাই বলেননি তিনি।
গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে খোঁজ নেন। বৈঠকে পূর্ত দফতরের এক আধিকারিককে দাঁড় করিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা কী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করেছেন? মুর্শিদাবাদে যে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে তার ডিপিআর তো পূর্ত দফতর করছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট কত?’ মুখ্যমন্ত্রীর ওই প্রশ্নের উত্তর দিতে ওঠেন রাজ্য শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব মণীশ জৈন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট পরিকল্পনা স্তরে আছে।’ এর পরেই রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিআর যাতে একই রকম হয় সে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষকে দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মেডিক্যালে মাঝে মধ্যে পূর্ত দফতরের এসি থেকে আগুন লেগে যায়। দেখে নেবেন সিসিটিভি যেন কেউ ঘুরিয়ে দিতে না পারে। এমন জায়গায় রাখবেন যাতে হাত না পায়। আগুন লাগানোর ঘটনা তো ভেতরকার লোকেই করে।’ গতকাল সাগরদীঘিতে তাঁর সভার পরই বাহালনগরে, জম্মু-কাশ্মীরের কুলগামে জঙ্গীদের গুলিতে নিহত শহীদ শ্রমিকদের বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। দেখা করেন আহতদের সঙ্গেও। প্রত্যেকের বর্তমান পরিস্থিতির খোঁজ নিয়ে সমস্যার দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।